খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। একই সঙ্গে রামগড় কৃষি অফিসের সহায়তায় সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পরীক্ষামূলকভাবে কৃষক প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৩ হেক্টর জমিতে এই ফুলের আবাদ করা হয়। রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এসএম ফয়সাল জানান, সূর্যমুখীর তেল মানবদেহের ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। এ তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত এ তেলে প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় এটি আমাদের শরীরের দুর্বলতা কমায় ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে এ ফুলের তেল ১০ গুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। এ তেল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগীর জন্যও নিরাপদ, ক্যান্সার প্রতিরোধক ও মানসিক চাপ দূর করে। তেলটিতে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এককথায় সূর্যমুখী তেল মানবদেহের মহৌষধ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নাকাপ, দাতারাম পাড়া, লাচারীপাড়া ও ফেনীরকুল চরসহ বিভিন্নস্থানে প্রাথমিকভাবে ২০ জন কৃষক ২০ বিঘা জমিতে কৃষক প্রণোদনা প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় সূর্যমুখী ফুলের চাষের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে রামগড় উপজেলাতে প্রাথমিকভাবে মোট ৩ হেক্টর জমিতে এই ফুলেন পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। তবে সূর্যমুখী ফুল থেকে স্থানীয় পর্যায়ে তেল সোধনের ব্যবস্থা করা গেলে এটি চাষাবাদে কৃষকরা আরো উৎসাহী হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। জাপান প্রেরত প্রবাসী ক্যশাই মার্মা জানান, কৃষি অফিসের প্রণোদনা পেয়ে উৎসাহিত হয়ে ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। এটি একদিকে মনোমুগ্ধকর অন্যদিকে লাভজনক ফসল। প্রথমবারই ভালো ফলন হয়েছে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণে আবাদ করার পরিকল্পনা করেছি। লাচারীপাড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা চিং থোয়াই মগ জানান, ধান-পাট চাষে প্রচুর পরিশ্রম এবং খরচ হয় কিন্তু এটি চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে। রামগড় উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফ উল্যাহ বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার-ওষুধ কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরী জানান, পুষ্টি চাহিদা পূরণে সূর্যমুখী তেলের জন্য বিদেশ থেকে এর বীজ আমদানি করতে হয়। দেশে এর আবাদ করা গেলে আর তা করা লাগবে না।
তিনি বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয়। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও এর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।