ঢাকা ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

পাখি পালনে ভাগ্য বদল

পাখি পালনে ভাগ্য বদল

খাঁচায় কয়েক জোড়া কবুতর দিয়ে শখের বসে শুরু করেছিলেন পাখি পালন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পাখির সংখ্যা বাড়ায় শখ বদলে রূপ নেয় ব্যবসায়। তারপর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছাতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার পাখি খামারি গোলাম মোস্তফা। খামারি গোলাম মোস্তফা উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের তেঁতাভূমি এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে বাড়ির বিশাল খামারের পাশাপাশি তার রয়েছে দুটি পাখির দোকান। বেকারত্ব ঘুচিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালনে তার সফলতার গল্প এখন বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, মফস্বল শহরে এ রকম পাখির দোকান পেয়ে পাখিপ্রেমীরা সহজেই নানা জাতের পাখি ও কবুতর অনায়াসেই সংগ্রহ করতে পারছে। আমিও তার কাছ থেকে পাখি কিনি। পাখির ব্যবসায় সে সফল। জানা গেছে, দেশি-বিদেশি পাখি পালন করে এখন সফলতার সিঁড়ি খুঁজে পেয়েছেন মোস্তফা। এখন বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন ও বিক্রি করছেন তিনি। নিজের বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচে সফল হওয়ার গল্প শোনান খামারি গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, শখের বসে খাঁচায় পাখি পোষার ইচ্ছে হয়। তারপর গত ২১ সালের শুরুর দিকে খাঁচায় কয়েক জোড়া কবুতর নিয়ে পাখি পোষা শুরু করি। পরে কবুতরের সংখ্যা বাড়ায় কবুতরসহ পাখির খামার করার পরিকল্পনা মাথায় আসে। পরিকল্পনা মতে খামার স্থাপন করে পাখি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রতিমাসে পাখি বিক্রি করে আমার আয় হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে আমি এগিয়ে যেতে চাইছি আমার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন-চূড়ার দিকে। শখের বসে খাঁচায় পাখি পালন শুরু হলেও এখন আমি পুরোদমে বাণিজ্যিকভাবে সফলতার সঙ্গে পাখির ব্যবস্থা করছি। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং এ উপজেলা ছাড়িয়ে আশপাশের উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকেও পাখি কিনতে অনেকেই আসছেন। চেষ্টা এবং শ্রম থাকলে সফলতা আসবেই। আমি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। সম্প্রতি তার পাখির খামার ও দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, তার সংগ্রহে বর্তমানে পাকিস্তানি ব্লু সিরাজি, ব্লাক কিং, মুবভাই, এক্সিবিশন হোমার, পাকিস্তানি হাই-ফ্লামিং, ড্যানিশ টাম্বলার, জার্মান আউল, ক্যাপাচিনো, ময়না ঠোঁট ও মালটেসসহ নানা জাতের কবুতর রয়েছে। কবুতরের পাশাপাশি আছে বাজরিকা, ফিঞ্চ, মুনিয়া, কোয়েল, ডায়মন্ড টিয়া, ডায়মন্ড ডোভ কোকাটল, লাভবার, প্রিন্স, বাজরিগার, ডায়মন্ড ঘুঘু, টাইগার মুরগি, তিতির, জাবাসহ প্রায় ৫০-৬০ জাতের পাখি। এ ছাড়াও তার খামারে ও দোকানে রয়েছে খরগোশ, একুরিয়াম ও সামুদ্রিক নানা ধরনের সৌখিন মাছ। খামার ও দোকানের এসব পাখির অনবরত কিচিরমিচির শব্দে চারপাশ মুখরিত থাকে। সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পর তা বড় করা হয়। এরপর বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। এসব পাখিকে খাবার হিসেবে চিকন চাল, কাউন, চিনা, খুদ ও সূর্যমুখী ফুলের বীজ খাওয়ানো হয়। বর্তমানে খরচ বাদে গোলাম মোস্তফা মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন। ব্যবসায় পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে তার। পাখি ক্রেতা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগে আমি এসব পাখি কুমিল্লা বা ঢাকা থেকে সংগ্রহ করতাম। এখন ব্রাহ্মণপাড়ায় পাখির দোকান হওয়ায় আমাদের মতো পাখি প্রেমীদের জন্য ভালো হয়েছে। আমি প্রায়ই মোস্তফা ভাইয়ের কাছ থেকে কবুতর ও পাখি নেই। তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আমিও বাড়িতে ছোট পরিসরে পাখির খামার করার পরিকল্পনা করছি। এদিকে পশু-পাখি পালনে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইজমাল হাসান বলেন, অল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে পাখি পালন করা সম্ভব। মোস্তফার মতো উপজেলার অনেক যুবক পশু এবং কবুতর ও নানা জাতের পাখি পালন করে স্বাবলম্বী হতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত