জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়া সত্ত্বেও গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর অবশেষে গাজা উপত্যকায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে। এরপরই গাজায় গত প্রায় ছয় মাস ধরে চলে আসা ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের ক্ষেত্রে আশার সঞ্চার হচ্ছে। ইসরায়েল বলছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়া সত্ত্বেও গাজায় হামলা বন্ধ করবে না তারা। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও তেল আবিব গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি করবে না বলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গত সোমবার জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে কাটজ তার অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি করবে না। তিনি জানান হামাসকে ধ্বংস এবং সমস্ত বন্দি ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত লড়াই চলবে। সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসলামিক পবিত্র মাস রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। পবিত্র এই মাসটি মধ্যপ্রাচ্যে গত ১১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের ১০ জন নির্বাচিত সদস্যের উপস্থাপিত এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪টি দেশ ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে সেখানে একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত ছিল। এছাড়া প্রস্তাবটির বিপক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন বা ভেটো ক্ষমতারও প্রয়োগ করেনি পরাশক্তি এই দেশটি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের দূত গিলাদ এরদান দাবি করেছেন, জাতিসংঘের এই প্রস্তাব গাজা থেকে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি ‘নিশ্চিত করার জাতিসংঘের এই প্রস্তাবে ‘পবিত্র রমজান মাসের জন্য সকল পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। যা পরে একটি স্থায়ী টেকসই যুদ্ধবিরতির দিকে পরিচালিত হবে।’ এই প্রস্তাবে ‘সমস্ত বন্দির অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির পাশাপাশি তাদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করার’ দাবিও করা হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের অভিযোগ উত্তর গাজায় সাহায্য সরবরাহে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলায় প্রতিনিয়ত প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এতে করে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩২ হাজার ৩৩৩ জনে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজার ৬৯৪ জন মানুষ। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মূলত ইসরায়েলি হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।