নিজ জমির উপর প্রভাবশালীর কুদৃষ্টি

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করলেন শহীদ আজাদের মা

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের শহীদ আজাদের মা ননী বেওয়া (১০৩)। তিনি শহরের বিএ কলেজ রোডের বাসিন্দা এবং মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র সন্তান হারা শহীদ আবুল কালাম আজাদের মা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে সন্তান এবং স্বাধীনতার পর স্বামী হারানো ননী বেওয়ার দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার। তার এক মেয়ে সম্প্রতি মারা গেছেন। দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তাকে দেয়া হয় ৮ শতকের এক খণ্ড জমি এবং তৎসংলগ্ন ২৯ শতকের একটি পুকুর। জমির বাষিক লিজ দিয়েই তাদের সংসার চলছে। তবে ১৯৭৩ সাল থেকে ওই জমিতে বসবাস করলেও সরকারিভাবে স্থায়ী বন্দোবস্ত না দেয়ায় মাঝে মধ্যেই নানা ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে। ১৯৪৬ সালে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার জানপুর মহল্লায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্থানীয় ভিক্টোরিয়া স্কুলের ১০ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আজাদ এবং তিনি ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। পরে ৭ নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর কামরুজ্জামান ও গ্রুপ কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামানের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।

১৯৭১ সালের ১৭ জুলাই পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শাহাদৎ বরণ করেন। তিনি শহীদ হওয়ার পর - রণাঙ্গনে শহীদ হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ স্বাধীনের প্রায় ২বছর পর এক শোকবার্তায় তিনি আজাদের শহীদ হওয়ার খবর ও পরিবারকে দিতে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কাছে এক হাজার টাকা পাঠান। সেইসাথে বঙ্গবন্ধু স্থানীয় প্রশাসনকে শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য একটি বাড়ি ও পুকুর দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই জমি এখন স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়নি। আজাদ শহীদ হওয়ার পর প্রশাসন সরকারিভাবে লিজ দেয়া ওই বাড়িতে ১৯৮৫-৮৬ সালে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দেয়া হয়।

নাম দেয়া হয় শহীদ আবুল কালাম আজাদ স্মৃতিসৌধ। এ স্মৃতির কিছু অংশ ভেঙে গেলেও তা সংস্কার করা হয়নি।

শতবর্ষি শহীদ জননী ননি বেওয়া জানান, প্রতি বছর সন্তানের স্মৃতি ফলক নিজেই ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতাম। কিন্তু এখন বয়সের ভারে সেই কাজ করতে পারছি না। মহান স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে সরকার এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে আগে নিমন্ত্রণপত্র দেয়া হলেও প্রায় ১২ বছর তা বন্ধ রাখা হয়।

সেই থেকে মনে হয়, একজন শহীদের মা হয়েও অবজ্ঞার পাত্র। তবে এবার জেলা প্রশাসন মহান বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসের একটি নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার আমল থেকে ভাতার পাশাপাশি রেশনিং পাচ্ছি। কিন্তু মাথাগোঁজার ঠাঁই এখনো নেই বললেই চলে। এজন্য জীবন সায়াহ্নে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সিরাজগঞ্জ কলেজ মাঠে আমি শেখ সাহেবকে মাথায় টুপি পড়িয়েছিলাম। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল- মা-আমিই আপনার আজাদ। এমন আবেগময় স্মৃতি এখনো ভুলিনি। এ বিষয়ে শহীদ আজাদের ভাগ্নে আমিনুল ইসলাম জানান, আমার নানির বর্তমান বয়স প্রায় ১০০ এর ওপরে।

দেশ স্বাধীনের পর থেকে একাধিকবার চিঠি চালাচালি হলেও তাকে বসবাসের জন্য দেয়া এক টুকরো বাড়ি ও পুকুরের স্থায়ী সমাধান দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে নিজেই হতাশাগ্রস্থ। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করছি- বিষয়টি তার জীবন সায়াহ্নে সমাধান হোক। তার আর কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় এখন ওই শহীদ পরিবারের জায়গার ওপর অনেক প্রভাবশালীর কুদৃষ্টি পড়েছে।