সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে লিখিত পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত একযোগে ২৪ জেলার ৪১৪ কেন্দ্রে এ পরীক্ষা হয়। এবারের পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি এবং অনিয়মের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভাবিত ডিজিটাল ডিভাইস শনাক্তকরণ যন্ত্র ‘সুরক্ষা’ প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সফলতা মিলেছে। গতকালের পরীক্ষায় ২৫টি যন্ত্র দিয়ে পাঁচটি টিম করে পাঁচ জেলার কেন্দ্রগুলোতে পাইলটিং (পরীক্ষামূলক ব্যবহার) করা হয়। এতে এবারের পরীক্ষায় জালিয়াতি-অনিয়ম শূন্যের কোটায় নেমেছে। পরীক্ষায় শেষে দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আন্দোলনে নামে প্রার্থীরা। উচ্চ আদালতে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে রিটও করেন কিছু শিক্ষার্থীরা। তবে দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহে তুলনামূলক সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে, গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদের বরাতে বলা হয়েছে, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতি রোধে বুয়েট কর্তৃক উদ্ভাবিত ডিভাইস শনাক্তকরণ সিস্টেমের কার্যকর প্রয়োগের ফলে অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
সচিব বলেন, প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় কিছু ক্ষেত্রে অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা নজরে আসায় মন্ত্রণালয় এ ধরনের অপপ্রয়াস রোধককল্পে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় এ ধরনের অভিযোগ খুব স্বল্প পরিমাণে এসেছে।
ফরিদ আহাম্মদ আরো বলেন, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় এ ধরনের অভিযোগ যাতে না ওঠে, সেজন্য কার্যকর পন্থা খুঁজে বের করতে বুয়েটের আইআইসিটি বিভাগের অধ্যাপক এসএম লুৎফুল কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বুয়েট ইনোভেশন টিম স্বল্পসময়ে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অসদুপায় অবলম্বন শনাক্তকরণে সহজ ও কার্যকর সিস্টেম উদ্ভাবন করে। এতে মন্ত্রণালয় আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলায় নতুন এ সিস্টেমের সহজ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এ সিস্টেম চালু করা গেলে ডিভাইসমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হবে। তখন কেউ পরীক্ষা নিয়ে কোনো অভিযোগ তোলার সুযোগ পাবেন না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষার্থী জালিয়াতির উদ্দেশ্যে কানের ভেতরে ডিজিটাল ডিভাইস রাখলে উদ্ভাবিত যন্ত্রটি তার সন্ধান দেবে। এতে একটি লাইট জ্বলে উঠবে এবং শব্দ সংকেত বাজবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুরক্ষা’।
বুয়েটের আইআইসিটিকে ইনোভেশন ফান্ডের আওতায় ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ যন্ত্র তৈরিতে প্রাথমিকভাবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। পরে বেশি পরিমাণে উৎপাদন করা হলে খরচ পড়বে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। প্রথমবারের মতো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলায় এ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
গত বছরের ১৮ জুন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ ধাপে আবেদন করেন দুই বিভাগের তিন লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন। তবে গতকালের পরীক্ষায় ঠিক কতজন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন, সেই হিসাব এখনো জানায়নি মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।