হাতে ভাজা মুড়ি বেচে সংসার চালাচ্ছে টাঙ্গাইলের সখীপুরে শতাধিক পরিবার। রমজান উপলক্ষে হাতে ভাজা মুড়ির কয়েকগুণ চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদার কথা ভেবে উপজেলার চারটি গ্রামে গড়ে উঠেছে হাতে ভাজা মুড়ির কারখানা। ওই চার গ্রামের স্বল্প আয়ের শতাধিক পরিবার মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। এই হাতে ভাজা মুড়ি জেলা শহর টাঙ্গাইল ও রাজধানী ঢাকাতেও রপ্তানি হচ্ছে। সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার কইয়ামধু, বেড়বাড়ী, রতনপুর ও কালিদাস গ্রামকে অনেকেই মুড়ির গ্রাম হিসেবেই চেনেন। তারা কোনো রাসায়নিক পদার্থ ছাড়াই মুড়ি ভাজছেন। কালিদাস গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা রানী সরকার ও তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে নিলয় সরকারকে নিয়ে চুলায় মাটির হাঁড়িতে মুড়ি ভাজছিলেন। একটি চুলায় পদ্মারানী চালের সঙ্গে লবণের পানি মিশিয়ে ভাজছেন। আরেকটি চুলায় ছেলে বড় একটি হাঁড়িতে বালু গরম করছে। একপর্যায়ে চাল ভাজা হলে ওই গরম বালুর হাঁড়িতে গরম চাল ঢেলে দেওয়া হয়। পদ্মা রানী তখন বালুর হাঁড়িটি ঘোরাতে থাকেন। ৩০ সেকেন্ডের ভেতর সেই হাঁড়িতে চাল ফুটে মুড়ি তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে হাজার ফোঁড়ের একটি হাঁড়িতে (স্থানীয় ভাষায় ঝাঁঞ্জর) বালুসহ মুড়ি ঢেলে দেওয়া হয়। ওই ঝাঁঞ্জরে মুড়ি আটকা পড়ে আর বালু ফোঁড়ের ভেতর দিয়ে নিচের পাতিলে ঝরে পড়ে। এভাবেই হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি হয়। পদ্মা রানীর বাড়ির পূর্ব পাশে আলো রানীর বাড়ি। ওই বাড়িতে দেখা যায়, স্বামীর জলধর সরকারকে নিয়ে ৫০ বছর বয়সি আলো রানী একই কায়দায় মুড়ি ভাজছেন। আলো রানী জানান, স্বামী অসুস্থ অন্য কোনো কাজ করতে পারে না। চারজনের সংসার মুড়ি ভেজেই চালাতে হচ্ছে। উপজেলার কইয়া মধু গ্রামের এসহাক ও কামাল হোসেনের বাড়িতেও হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি হয়। কামালদের বাড়ির পাশেই আলাউদ্দিনের বাড়ি। ওই বাড়িতে গিয়েও দেখা যায়, স্ত্রী ফাহিমা আক্তারের সঙ্গে আলাউদ্দিন মুড়ি ভাজছেন। স্বামী মুড়ির চাল ভাজছেন আর স্ত্রী বালুর পাতিল গরম করছেন। এভাবে দুজনে মিলেমিশে মুড়ি ভাজার কাজ করছেন।
আলাউদ্দিন বলেন, রমজান মাস এলেই হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বাড়ে। রোজার আগে কমপক্ষে ১০ মণ মুড়ি ঢাকার কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছেন। ট্রাকে করে ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে ৫০ মণ মুড়ি নিয়ে গেছেন। তিনি আরো জানান, দুই মণ চালের মুড়ি ভাজতে এক কেজি লবণ, ৫০০ টাকার লাকড়ি খরচ হয়। এক কেজি মুড়ি তৈরিতে তাদের খরচ হয় ৮০ টাকা। বাড়ি থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। তবে যে পরিশ্রম হয়, তাতে টাকায় পোষে না।
কইয়ামধু গ্রামের ফরিদ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের ফিরোজা নামের এক গৃহবধূ ঢাকায় থাকেন। স্বামী পুলিশে চাকরি করেন। তিনি গ্রামে বেড়াতে এসেছেন। ওই গৃহবধূ নিজে মুড়ি ভাজা দেখে কিনে নিয়ে যেতে ওই বাড়িতে এসেছেন। ফিরোজা আক্তার বলেন, ‘ঢাকার বাজারে সবকিছুতেই ভেজাল। কিন্তু আমার দেখা এই মুড়িতে কোনো ভেজাল নেই। দামও কম। তাই এক বস্তা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’
উপজেলার বেড়বাড়ী গ্রামের সরলা রানী জানান, এক কেজি চালে ৮৫০ গ্রাম মুড়ি হয়। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত একটানা মুড়ি ভেজে গেলে এক দিনে প্রায় দুই মণ চালের মুড়ি ভাজা যায়। দিনে দুজনে মিলে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় করা যায়। তবে এখন তেমন পোষে না।
সখীপুর বাজারের তমিজ উদ্দিন নামের এক মুড়ি ব্যবসায়ী বলেন, হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা রয়েছে। রমজান মাসে এর পাঁচ গুণ চাহিদা বাড়ে। ফলে এ মাসে লাভ হয় বেশি।