পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লায় ঈদের বাজারে এখনই চলছে কেনাকাটার ধুম। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছোট্ট শিশু থেকে সব বয়সের নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায় নগরীর অভিজাত মার্কেটের দোকানগুলোতে। সীমান্তবর্তী এ জেলায় ভারতীয় বাহারি পোশাকে সয়লাব হয়ে আছে শপিং মলগুলো। এছাড়া সীমান্তবর্তী এ জেলার পাঁচটি উপজেলার সদরসহ আশপাশের বাজারগুলোতেও ভারতীয় পোশাকসহ নানা পণ্যসামগ্রীর রমরমা ব্যবসা চলছে। নানা পেশার মানুষ তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য সাধ্যমত পোশাক-আশাক ক্রয় করছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের পূর্বপ্রান্তের সীমান্তবর্তী প্রাচীন জেলা কুমিল্লার ঈদ বাজার এখন ভারতীয় পোশাকে সয়লাব। জেলা সদরসহ সীমান্তবর্তী এ জেলার বিশেষ করে বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার হাট-বাজারগুলোতে ভারতীয় পোশাকসহ নানা পণ্যসামগ্রীর রমরমা ব্যবসা চলছে। জেলার ভারতীয় পণ্যসামগ্রীর প্রবেশদ্বারখ্যাত বুড়িচং সীমান্তের নগর, আনন্দপুর, গুচ্ছগ্রাম পাহাড়ি এলাকা, লড়িবাগ, শংকুচাইল, ভবেরমুড়া, দক্ষিণগ্রাম, ঘিলাতলা এলাকা দিয়ে অবৈধপথে দিনে-রাতে থানা ও হাসপাতাল সড়কসহ বিভিন্ন রুটে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী দেদারসে আসছে। এসব এলাকার প্রতিটি মার্কেটেই ভারতীয় পোশাকের আধিপত্য। অভিজাত বিপণি বিতান, শপিং সেন্টারগুলোতে অধিকাংশই চোখ ধাঁধানো ভারতীয় পোশাক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সীমান্তপথে দ্বিগুণ হারে এসেছে ভারতীয় পোশাক। কাস্টমসকে ফাঁকি দিয়ে এর অধিকাংশই এসেছে অবৈধ পথে। রকমারি শাড়ি ছাড়াও ছোটদের জন্য রয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাপড়। ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় বাহারি ডিজাইন ও চটকদার রঙের দাপটে টিকতে পারছে না আমাদের দেশীয় পোশাক। তাঁতের শাড়ি, টাঙ্গাইলের জামদানি, রাজশাহীর সিল্ক ও কুমিল্লার খাদিসহ দেশীয় বিখ্যাত কাপড় অনেকটাই যেন চাপা পড়েছে ভারতীয় পোশাকের চাকচিক্যের দাপটে। ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় পোশাক ও পণ্যসামগ্রী চোরাই পথে প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িচং থানার ওসি আবুল হাসনাত খন্দকার বলেন, ‘এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্ব বিজিবির, পুলিশের কী করার আছে?’ এদিকে নগরীর নিউ মার্কেট, সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক টাওয়ার, কুমিল্লা টাওয়ার, আড়ং, টপ টেন, ইজি ফ্যাশন, ইস্টার্ন এয়াকুব প্লাজা, সমবায় মার্কেট, জমজম টাওয়ার, টাউন হল সুপার মার্কেট, চৌরঙ্গী মার্কেট, সুফিয়া ম্যানসনসহ বিভিন্ন অভিজাত শপিং মল ও বিপণিবিতান রয়েছে। মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মা-বাবা, বড় ভাই-বোনের হাত ধরে ছোট্ট ছেলেমেয়েরা এসেছে ঈদের বাজারে। এবারের ঈদে ছোট বাচ্চাদের পোশাকেও এসেছে চাকচিক্যপূর্ণ বৈচিত্র্যের সমাহার। নামের বাহারেও বাংলা, হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমার প্রভাব। এসব পোশাকের চাহিদাও বেশি বলে জানালেন রিলেশান থ্রি-পিস সেন্টারের পরিচালক আলী হায়দার কামাল। তিনি জানান, এখনই কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে। এবার উন্নতমানের দেশি থ্রি-পিস ভালো বিক্রি হচ্ছে। মেয়েরা এবার পাকিস্তানি ব্র্যান্ডের থ্রি-পিস বেশি পছন্দ করছে। বিভিন্ন লেহেঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা করে। বিদেশি ব্রান্ডের ছেলেদের পোশাকের জন্য অভিভাবকরা বেছে নিচ্ছেন রকমারি নামের শার্ট ও প্যান্ট। ছোটদের জন্য পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকও কিনছেন কেউ কেউ। এর মধ্যে রয়েছে টপস, লং শার্ট, শর্ট শার্ট, টাইট জিন্সসহ বিভিন্ন রঙের ও দামের গেঞ্জি সেট। এছাড়া ছোট ছেলেদের চেক, স্ট্রাইপ, লুডেড, ডেনিস প্যান্ট, জিন্স প্যান্ট এবং মেয়েদের এমব্রয়ডারির কাজ, লেইস, ফুল ছাপার ফ্রক থ্রি-পিস, শিফন, সিল্ক, হাতে কাজ করা পোষাক বেশি বিক্রি হচ্ছে।