গাজার আল শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী, যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত মানুষ, মেডিকেল কর্মীসহ চার শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। সেখানে ১৩ দিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। খবর আল জাজিরার।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরই গাজায় আক্রমণ করে ইসরায়েল। গাজার উত্তর, দক্ষিণ এবং মধ্যাঞ্চলে কোনো স্থানই ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি। পুরো গাজা যেন এখন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ মসজিদ, বাড়িঘর এবং ভবনই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৩২ হাজার ৭০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৭৫ হাজার ১৯০ জন। এদিকে ইসরায়েলকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বোমা ও যুদ্ধবিমান হস্তান্তরের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুইটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও ইসরায়েলের রাফা অভিযান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। নতুন প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে রয়েছে ১৮০০ এমকে ২০০০ এলবি বোমা ও ৫০০ এমকে-৪২ ৫০০ এলবি বোমা। ওয়াশিংটন পোস্টকে ওই সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরায়েলকে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। গাজায় যখন অব্যাহত বোমা হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি ইসরায়েল তখন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই সামরিক সহায়তার খবর এলো। ইসরায়েলকে অব্যাহত প্রতিরক্ষা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে কিছু ডেমোক্রেটস ও আরব আমেরিকান গ্রুপ বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করছেন।
এদিকে ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি দক্ষিণ গাজার রাফায় আশ্রয় নিয়েছে। এটি মিশর সীমান্তবর্তী এলাকা। এরই মধ্যে উত্তর ও মধ্য গাজাকে ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এখন আন্তর্জাতিক সব চাপ উপেক্ষা করে রাফায়ও অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি সেনাদের পরিবারের সদস্যদের বলেছেন, একমাত্র সামরিক চাপের মাধ্যমেই তাদের মুক্ত করা সম্ভব। তাছাড়া রাফায় সেনাবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। রাফায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে উত্তর গাজা ও খান ইউনিস জয় করেছি।
গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি ফ্রান্স-মিসর-জর্ডানের
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় ছয় মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ। এই অবস্থায় গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে ফ্রান্স, মিসর ও জর্ডান। কায়রোতে বৈঠকের পর তারা এই দাবি জানান। অন্যদিকে ইরান-সমর্থিত ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের অঙ্গীকার করেছে। গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মিসর, ফ্রান্স এবং জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজায় ‘অবিলম্বে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ এবং হামাসের হাতে আটক সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে তিন কূটনীতিকের বৈঠকের পর এই আবেদন জানানো হয়। বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন সেজোর্নও। তিনি সেখানে বলেন, তার সরকার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধের ‘রাজনৈতিক’ নিষ্পত্তির জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করবে। তিনি আরও বলেন, সেই প্রস্তাবে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সমস্ত মানদ-’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মূলত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুইটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে সমর্থন করে এলেও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ইসরায়েলি সরকার এর বিরোধিতা করছে।
এদিকে ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের অঙ্গীকার করেছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসলামিক জিহাদের নেতা তেহরানে আলোচনার জন্য ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। জিয়াদ আল-নাখালাহ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছেন, তার দল গাজায় ‘যুদ্ধে বিজয়ী’ হবে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের জন্য ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ানকে তিনি ধন্যবাদও জানিয়েছেন বলে দেশটির সরকারি বার্তাসংস্থা ইরনা জানিয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্টের ২৬ সদস্য নিহত হয়েছেন। প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) বলেছে, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তার দলের ২৬ সদস্যকে হত্যা করেছে।
গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, ‘তাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করার সময় এবং রেড ক্রিসেন্টের নিরাপদ প্রতীক পরিধান করে থাকার সময়ও’ তাদের প্রায় ১৫ জন কর্মী নিহত হয়েছেন।