কুমিল্লার হোমনায় প্রেমসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মো. ফয়সাল নামের এক প্রেমিক যুবককে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি প্রেমিকার ভাইসহ দুই যুবককে মৃত্যুদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। গতকাল দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হোমনা উপজেলার রাজনগর গ্রামের মো. ফুল মিয়ার ছেলে মো. শামীম মিয়া (২৪) ও একই উপজেলার সাফলেজি গ্রামের মো. বেদন মিয়ার ছেলে মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলাল (২০)। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, হোমনা উপজেলার রাজনগর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে মো. ফয়সালের (২২) সাথে একই গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ে মেহেদী আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে তা মেনে নিতে পারছিলেন না মেহেদী আক্তারের ভাই শামীম মিয়া। পরে শামীম তার বোনের প্রেমিক ফয়সালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৫ জুন শামীম ফোন করে ফয়সালকে স্থানীয় আমিরুল ইসলাম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায়।
এ সময় শামীম ও তার সহযোগী দুলাল মিয়া প্রথমে ফয়সালকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে ও পরে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যার পর তার মরদেহ ওই বিদ্যালয়ের মাঠে পুঁতে রাখে। এদিন রাতে ফয়সাল বাড়ি না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও না পেয়ে পরদিন তার বাবা মকবুল হোসেন হোমনা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শামীমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার রহস্য বের হয়ে আসে।
পরে তার দেখানোমতে বিদ্যালয়ের মাঠের মাটির নিচ থেকে পুলিশ ফয়সালের মরদেহ উদ্ধারসহ দুলাল মিয়াকে আটক করে। এ ঘটনায় নিহত ফয়সালের বড় বোন সালমা আক্তার বাদী হয়ে প্রেমিকার ভাই শামীমকে প্রধান আসামি করে মোট ৭ জনের নাম উল্লেখপূর্বক থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় গ্রেফতার শামীম ও দুলাল পরিকল্পিতভাবে ফয়সালকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। পরে ২০২১ সালের ১৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শেখ মাসুদ ইকবাল মজুমদার জানান, এ মামলায় ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনাফন শেষে গতকাল দুপুরে আদালত আসামি মো. শামীম মিয়া ও মো. দুলাল মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড, প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করে রায় দেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী বিমল কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, রায়ের কপি হাতে পেলে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।