চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ছোট-বড় সব মার্কেটে এখন ক্রেতার ভিড়। এবার অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকার বিকিকিনি হতে পারে বলে দোকান মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন। ঈদকে ঘিরে নিউমার্কেট, জহুর হকার মার্কেট এবং আশপাশের অন্তত ২ হাজার হকারের পসরায় জমে উঠেছে কেনাকাটা। নিউমার্কেট নিম্নবিত্তদের মার্কেট হিসাবে পরিচিত। আর জহুর হকার্স মার্কেট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের লোকজনের পুরোনো পরিচিত মর্কেট। এই দুই মার্কেট ঘিরেই ছোট খুপরিতে ঈদের জামা কাপড়ের পসরা সাজিয়েছে অন্তত ২ হাজার ভাসমান হকার। পুরো এলাকায় জমে উঠেছে ভিন্ন ধারার ঈদবাজার। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। ব্যবসায়ী নেতারা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবার ১০ হাজার কোটি টাকার বিকিকিনির টার্গেট আছে। তারা বলছেন, ক্রেতাও বেশ মিলছে বিক্রিও হয়েছে। ঈদের আগে বিক্রির পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে। চট্টগ্রাম মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালামত আলী জানান, ঈদকে ঘিরে এবার নগরীর মার্কেটগুলোতে অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হবে। আমাদের সমিতির অধীনে চট্টগ্রাম মহানগরীতে মুদি দোকান থেকে কাপড়ের দোকান মিলিয়ে তিন লাখ দোকান আছে। এর মধ্যে ছোট বড় মার্কেট মিলিয়ে কাপড়ের দোকান আছে সাত হাজারের বেশি। এসব দোকানে প্রতি বছরের মতো এবারও হাজার কোটি টাকার বিক্রির টার্গেট আছে।
বিক্রি কেমন হয়েছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন মার্কেটে খবর নিয়ে দেখেছি বিক্রি বেশ ভালোই হয়েছে। বিদেশি কাপড়চোপরের চেয়ে দেশি কাপড়ের চাহিদা বেশি। সরবরাহ অন্য বছরের তুলনায় বেশ ভালো। তাই এখনো মনে করি ব্যবসায়ীরা বেশ ভালোই ক্রেতা পাচ্ছেন।
সরেজমিন বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, জহুর হকার্স মার্কেটের প্রতিটি দোকানেই নানা ধরনের ঈদের পণ্যে ঠাসা। মোট ৮০১টি দোকান আছে এই মার্কেটে। সব ধরনের আইটেম পাওয়া যায় এই মার্কেটে। ঈদের ভরা মৌসুমে এখনো ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বাচ্চাদের জামা-কাপড় পাওয়া যায় এই মার্কেটে। দামি কাপড়ও মিলছে। তবে এই মার্কেটে মহিলাদের আইটেম খুব কম জানালেন বিক্রেতারা। মার্কেটের একেবারে মাঝামাঝি স্থানে দোকান করিম ব্রাদার্সের। দোকানের মালিক আবদুল করিম বলেন, বিকিকিনি বেশ ভালোই হয়েছ। তবে আমরা আশা করছি ঈদের আগ মুহূর্তে বিক্রি বাড়বে। আমাদের মার্কেটে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরাই বেশি আসে। জামাকাপড় দামের ক্ষেত্রে অভিজাত মার্কেটের চেয়ে অনেক কম। একটি প্যান্ট বা শার্ট এখানে ৭০০-৮০০ টাকায় পওয়া যায়। একই মানের শার্ট-প্যান্ট অভিজাত মার্কেটগুলোতে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা নেয়। অথচ মানের দিক দিয়ে একই। তাই এই মার্কেটের অবস্থা সম্পর্কে যারা অবগত তারা সারা বছর এখান থেকেই কেনে।
জহুর হকার্স মালিক সমিতির নেতারা জানান, ৮০১টি দোকানের প্রতিটি গড়ে ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়েছে এখন। দৈনিক অন্তত দেড় কোটি টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে। ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে বিক্রিও তত বাড়বে।
জহুর হকার মার্কেটের সাথেই নগরীর অন্যতম অভিজাত মার্কেট নিউমার্কেট অবস্থিত। এক সময় এই নিউ মার্কেট ছিল চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত ক্রেতাদের প্রথম পছন্দের মার্কেট। কিন্তু সেই জৌলুস নেই। নগরীতে অত্যাধুনিক লিফট এস্কেলেটর সমৃদ্ধ শপিং মল বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা কমে গেছে। গত শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের একপাশে এস্কেলেটর স্থাপন করা আছে। কিন্তু বন্ধ। দোকানিরা জানান, নিউ মার্কেটের ওই এস্কেলেটর অনেক দিন ধরেই বন্ধ। পাশের লিফটগুলো সচল না। দোকানিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে ক্রেতারা আগের মতো কেন আসবে। নতুন নতুন শপিং মল হয়েছে। ক্রেতারা এখন সেখানেই ছুটছে। এই মার্কেটের প্রথম প্রবেশ পথের সাথে লাগোয়া দোকান হোসাইনস শপ। এখানে শার্ট প্যান্ট থেকে মহিলাদের সব ধরনের কাপড়ের আইটেম পাওয়া যায়। দোকানের কর্মী মারুফ বলেন, দৈনিক ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। তবে বিক্রির পরিমাণ আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় দেখা যায়, স্বর্ণের দোকানগুলো একেবারে ফাঁকা। ক্রেতার অপেক্ষায় যেন বসে আছেন বিক্রেতারা। দুয়েকটি দোকানে ক্রেতা দেখা গেলেও বেশিরভাগ ক্রেতাশূন্য। দোকানিরা বললেন, ঈদের আগে ক্রেতা সমাগম বাড়তে পারে।
নিউ মার্কেট থেকে বের হতেই ফুটপাতজুড়ে প্রতি বছরের মতো এবারও হকারদের পসরা দেখা যায়। পুরো এলাকার ফুটপাত দখল করেই হকাররা পসরা সাজিয়েছেন। দোকানিরা জানান, আমাদের একবার উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ ছাড় হিসাবে দোকান খুলতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই ব্যবসা চলছে ফুটপাতে। নিউ মার্কেট থেকে বের হতেই ছোট অসংখ্য খুপরি দোকান। ফুটপাতের খুপরি দোকানে বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের শার্ট প্যান্ট থেকে পাঞ্জাবি পায়জামা সব কিছু। দোকানি আশরাফ জানান, বিক্রি তেমন নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্রি কম থাকে। তবে রাতের দিকে বিক্রি বেড়ে যায়। সব ধরনের ঈদের পোশাক পাওয়া যায় এসব খুপরি দোকানে। ৬০-৭০ টাকায় শার্ট প্যান্ট মেলে এখানে। থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। একেবারে হতদরিদ্র ক্রেতারা এসব খুপরি দোকানে ভিড় করছেন ঈদের কেনাকাটায়।
ফুটপাত উচ্ছেদ করার পর কীভাবে দোকানে পসরা সাজানো হয়েছে এ প্রশ্নে দোকানি জুয়েল বলেন, আমাদের কয়েক দফায় উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ঈদে যদি অমাদের ব্যবসা করতে না দেয় আমরা খাব কি।
পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিউ মার্কেট, জহুর হকার মার্কেটের নিচে আমতল এলাকার অংশ থেকে কোতোয়ালি মোড়, জুবলি রোড ঘিরে পসরা সাজিয়েছেন হকাররা। এসব হকারদের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে অভিযান চালিয়ে কয়েক দফায় উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু কোনো ধরনের তদারকি না থাকায় হকাররা আবার ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছেন। এতে শুধু মার্কেট নয় অফিসগামী লোকজনের চলাফেরাও সীমিত হয়ে গেছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ফুটপাতে চলাচলকারী লোকজনকে।