কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রোগী দেখেন রাজশাহীতে
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এ.এইচ.এম. আরিফ, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান দিনের পর দিন অফিস ফাঁকি দিয়ে রাজশাহীতে একটি বেসরকারি প্রাইভেট ডায়গনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখছেন। সপ্তাহে একদিন এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে দিয়ে আবার চলে যান। অফিস ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিধি ভঙ্গ করে রাজশাহীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুপুর থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা রোগী দেখেন তিনি। এদিকে অধ্যক্ষের মেডিক্যাল কলেজে না আসার সুযোগে রাম রাজত্ব কায়েম করছেন অফিস সহকারী জামান আহমেদ, হোস্টেল অ্যাটেনডেন্ট মারফিজা খাতুন রিতাসহ কয়েক জন। এছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির সময় সরকারি ও বেসরকারি খাতে আদায় করা অর্থ খরচ করা হচ্ছে দুই হাতে। ভূয়া বিল ভাউচারে উঠে যাচ্ছে মেডিক্যাল কলেজের লাখ লাখ টাকা। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজে মাস দুয়েক আগে যোগদান করেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। কুষ্টিয়া জেলায় বদলি হলেও তিনি রাজশাহীর মায়া ত্যাগ করতে পারছেন না। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন। এ কারনে তিনি কুষ্টিয়ায় নিয়মিত অফিস করেন না। মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, নতুন অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে সপ্তাহে এক দিন রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়ায় এসে অফিস করেন।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় কোন অনুষ্ঠান থাকলে তখন আসেন। সে সময় জরুরি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে যান।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিক্যালে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থা থাকলেও অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। অন্যরা যেখানে সময়মতো অফিস করেন সেখানে অধ্যক্ষের ডিজিটাল হাজিরা লাগে না। এদিকে দিনের পর দিন ঠিক মতো অফিস না করায় প্রশাসনিক কাজে নানা জটিলতা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে অধ্যক্ষ না এলেও ক্যাম্পাসে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করছেন অফিস সহকারী জামান আহমেদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রেষণে আসা জামান যোগদানের পর থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাতের মুঠোই রেখে পরিচালনা করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজে প্রতি বছর ১০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছেন। ভর্তির সময় প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ২২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে সরকারি অর্থের টাকাও ঠিক মতো ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাৎ করার মতো নজির রয়েছে। একই সাথে বেসরকারি খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয় করার মতো অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এদিকে ২০২০ সালের পর সোনালী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় জমাকৃত টাকার পরিমাণ মাত্র ১ লাখ ২০ হাজারের মতো। অথচ আরো বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা থাকার কথা এ শাখার হিসেবে। তদন্ত করলেই অর্থ নয়ছয়ের বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে জানান কয়েকজন শিক্ষক। তবে ভয়ে তারা কেউ পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে রাজী হননি। এসব অনিয়ম দীর্ঘদিন চললেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এদিকে অধ্যক্ষ রাজশাহীতে অবস্থান করায় প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হলেও দেখার কেউ নেই। সরকারি বিধি ভেঙে দিনের পর তিনি রাজশাহীতে অবস্থান ছাড়াও সেখানে রোগী দেখছেন। এদিকে অধ্যক্ষের হয়ে সব কিছু সামলান কয়েকজন শিক্ষক, অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মামুন ও অফিস সহকারী জামান। কয়েক দিন আগে সাংবাদিকরা গেলে মামুন বলেন, ‘স্যার ছুটিতে আছেন। আর অফিস সহকারী বলেন, তিনি বাইরে একটি অনুষ্ঠানে গেছেন। পরে তারা দুইজনই অধ্যক্ষের বিষয়টি নিয়ে চেপে যান। সপ্তাহে ৫ দিন অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের থিসিস পরীক্ষা নিতে যেতে হয়, এছাড়া মন্ত্রনালয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজ থাকে। অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি ম্যাক্সিমাম দিনই থাকি। আমি না থাকলে শিক্ষকরা উনাদের মতো কাজ করে নিতে পারেন। একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি অনুপস্থিত থাকে সেই ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হয় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমার থাকা বা না থাকা কোনো বিষয় না। ক্লাস হচ্ছে কি না, শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছে কি না, ছাত্রছাত্রীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, এটাই আসল বিষয়। আর আমি উপস্থিত না অনুপস্থিত সে বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন যারা রয়েছেন তাদের কাছে জবাবদিহি করব। আপনি নিয়মিত সপ্তাহে পাঁচ দিন রাজশাহীতে রোগী দেখেন দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এমন প্রশ্নেজবাবে তিনি বলেন, আমি রাজশাহীতে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রোগী দেখা শুরু করি। কুষ্টিয়াতে আপনার ডিউটি টাইম আড়াইটা পর্যন্ত তাহলে সাড়ে ৪টায় আপনি কীভাবে ওখানে রোগী দেখেন প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।