কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেছেন, অপহরণ বাণিজ্যে স্থানীয়দের সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরাও। অপহরণ বাণিজ্য বন্ধ করা ও মাদক, মানব পাচার, ডাকাতিসহ সমাজের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে স্থানীয়দের সহযোগিতা দরকার। গতকাল টেকনাফ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উদ্যোগে হ্নীলা রঙ্গীখালী দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত এ সভায় তিনি এ কথা বলেন। সে সঙ্গে এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে, কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। এসপি আরো বলেন, সমাজ থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও অপহরণ বাণিজ্য বন্ধ করাসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন। যদি স্থানীয়রা এগিয়ে আসে, তাহলে সমাজ থেকে এসব অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দিনে-রাতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ও বন্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো অপরাধ ঘটলে তার সঠিক তথ্য পুলিশ জানলে সেটির যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি গত ৯ মার্চ হ্নীলার প্রথম শ্রেণির মাদ্রাসার ছাত্র সোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে (৬) দুর্বৃত্তরা অপহরণ করার পরে চক্রটি বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করতে, সবর্শেষ কুমিল্লা জেলার লালমাই থানা এলাকায় লুকিয়ে ছিল। এ ঘটনার পর থেকে সোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করতে আমরা দিনে-রাতে নিরলসভাবে কাজ করে ২১ দিন পরে তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপহরণকারীর মূলহোতাসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, যে সব স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দিচ্ছেন, বা যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে বিনা ফরম পূরণে বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সুপারের বক্তব্যের আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধিগণ টেকনাফ উপজেলায় অপহরণ, মানব পাচার, মাদক ব্যবসা হচ্ছে তা প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেন।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া না দেওয়া, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প বের বাহির হতে না দেওয়া, স্থানীয় লোকজন কর্তৃক রোহিঙ্গাদের সহিত যোগসাজশে যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করে তা বন্ধ করা, পুলিশের সোর্স নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিক যাচাই-বাছাই করা, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাহিরে কোনো চাকরি বা কাজ করতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশের (প্রশাসন ও অর্থ) সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম, টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম হোসেন, টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) অপারেশন আব্দুর রাজ্জাক, টেকনাফ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ আলম বাহাদুরসহ টেকনাফ এবং উখিয়া থানার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ ব্যক্তিবর্গ। এ সভায় প্রায় ৮০০-৯০০ জন স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ দিনে ৩০ জন অপহরণের শিকার হয়েছে। আর গত তিন বছরে টেকনাফ উপজেলায় দেড় শতাধিক লোক অপহরণের শিকার হয়েছে। অপহরণের পরে মুক্তিপণ দিতে না পারায় ইজিবাইক ও সিএনজিচালকসহ কক্সবাজার থেকে টেকনাফে বেড়াতে আসা তিন যুবকসহ মোট পাঁচজন অপহরণের কবলে পড়েন। পরে দুর্বৃত্তরা মুক্তিপণ না পেয়ে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে পাহাড়ে রেখে পালিয়ে যায়।