বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মালামাল চুরি করে পালানোর সময় আটকাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে কেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকা দুই আনসারসহ পাঁচ নিরাপত্তা কর্মী। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্তর-পশ্চিম কোনের (মেটেরিয়াল ইয়ার্ড) ৩নং টাওয়ার (ডিউটি পোস্ট) এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- এসএসএসএলের নিরাপত্তা সুপারভাইজার আকরাম (৫৫), সাইদুল ইসলাম (৩৭), মিন্টু বৈরাগী (৪০) ব্রজেন মন্ডল (৩০) ও আনসার ব্যাটালিয়নের হাবিলদার কামাল পাশা (৩৮)। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভ্যন্তরিন চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় ব্রজেন মন্ডল ও আনসার সদস্য কামাল পাশাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড (এসএসএসএল) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ঘটনার সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই এলাকাতে দায়িত্বে ছিলেন। রড, স্কার্ভসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে কয়েকজনকে দেখে আটকাতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর দলবেঁধে হামলা করে তারা। এ সময় তাদের আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে কাছে থাকা মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা।
আহতদের প্রত্যেকের শরীরের এলোপাতাড়ি মারধরে জখম রয়েছে জানিয়ে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা রুহুল আমিন সজিব বলেন, রাত ১টার দিকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে দুজনের মাথা গভীর ক্ষত থাকাতে খুলনায় রেফার্ড করা হয়েছে। অন্যদের এখানে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, রাতে প্লান্টের ৫ ইয়ার্ডে একদল ডাকাত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় বাধা দিলে নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর হামলা হয়। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি এসএসএসএলের নিরাপত্তা সুপারভাইজার আকরাম হোসেন বলেন, কেন্দ্রের উত্তর-পশ্চিম কোনের ৩নং টাওয়ার (ডিউটি পোস্ট) এলাকায় কয়েকজনকে কিছু স্কার্ভ ও রড নিয়ে পালাতে দেখে বাধা দিতে যায় তারা। এ সময় দুই দিক দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জন সঙ্গবদ্ধ হয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এলোপাথাড়ি মারধর করে তাদের আটকে রেখে পাশের মেটেরিয়াল ইয়ার্ড থেকে মালামাল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। তখন আনসার সদস্যরা এলে তাদের উপরও হামলা করে। এ সময় একজন আনসার সদস্যকে রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে গুরুত্বর জখম করে। পরে আরো আনসার ও পুলিশ সদস্যরা এসে গুলি ছুড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আনসার ব্যাটেলিয়ানের পরিচালক মোল্লা আবু সাইদ বলেন, বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর হামলার খবর পেয়ে আনসার সদস্যরা এগিয়ে যায়। এ সময় তাদের উপর হামলা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৩০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। আমাদের একজন সদস্য আহত হয়েছে।
আলোচিত এই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহা: খালিদ হোসেন ও পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান ঘটনা স্থল পরিদর্শন শেষে সংবাদ কর্মীদের জানান এই ঘটনার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের দ্রুত সময়ে আইনের আওতায় আনা হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম মাঠে জোর গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করেছে। এছাড়া এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এজাহার দিলে মামলা দায়ের করা হবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।