গত বছরের ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতের তীব্রতা নতুন করে বাড়তে শুরু করার পর থেকে গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ১৪, ৩৫০ শিশু মারা গেছে। যা মোট নিহতের প্রায় ৪৪ ভাগ। গতকাল ফিলিস্তিনের ৫ এপ্রিল বার্ষিক শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ফিলিস্তিনিদের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এই তথ্য প্রকাশ করেছে। আল জাজিরা টেলিভিশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় চার শিশু মারা যায়। নিখোঁজদের মোট সংখ্যার অন্তত ৭০ ভাগ নারী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্করা পৌঁছেছে ৭ হাজারে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আগ্রাসনের ফলে ফিলিস্তিনের ৮ লাখ ১৬ হাজারেরও বেশি শিশুর মানসিক নির্যাতন, ভয়ভীতি, উদ্বেগ, বিষন্নতা এবং নিপীডনের শিকার হওয়ায় তাদের এখন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের প্রয়োজন হচ্ছে।’ পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুমান করেছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি ফিলিস্তিনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা ২৪ লাখ ৩২ হাজারে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ। এদিকে, আদমশুমারি অনুসারে, গাজা উপত্যকায় প্রায় ৪৩ হাজার ৩৪৯ শিশু এতিম বা পিতামাতা ছাড়াই বসবাস করে। এই জাতীয় শিশুর সংখ্যা ২০২০ সালে ছিল ২৬ হাজার ৩৪৯।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন মোট ১৯৬ জন ত্রাণকর্মী। এই ত্রাণকর্মীদের নিহতের ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সম্প্রতি গাজার দেইর আল বালাহতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) গাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে নিহত হন সাতজন ত্রাণকর্মী। এই ত্রাণকর্মীদের মধ্যে একজন অস্ট্রেলিয়া, তিনজন ব্রিটেন, একজন যুক্তরাষ্ট্রের, একজন পোল্যান্ডের এবং একজন ফিলিস্তিনের নাগরিক। ইসরায়েল প্রথমে এ ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় এবং দুইজন সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে। গত শুক্রবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এ সংক্রান্ত বিবৃতি জারির কয়েক ঘণ্টা পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘ইসরায়েলের সরকার তাদের ভুল স্বীকার করেছে। এটা ইতিবাচক, তবে কে ভুল করেছে তা মূল ব্যাপার নয়। মূল ব্যাপারটি হলো (ইসরায়েলি বাহিনীর) রণকৌশল এবং পদ্ধতি, যে কারণে এ ধরনের ঘটনা গাজায় প্রতিদিন বার বার ঘটছে।’
গত ৭ অক্টোবর গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৫ হাজার। সেই সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে গত কয়েক মাস ধরে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছে; কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামবে না। এদিকে গাজা উপত্যকায় অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানে ত্রাণ সরবরাহেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে উপত্যকায় বসবাসরত ২২ লাখ ফিলিস্তিনি ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছেন। খাবারের অভাবে মানুষের মৃত্যুও শুরু হয়েছে সেখানে। ইসরায়েলকে এ ইস্যুতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘যখন সহায়তার দরজা বন্ধ হয়, তখন ক্ষুধার দরজা খুলে যায়। গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বর্তমানে ভয়াবহ ক্ষুধার মধ্যে রয়েছে। শিশুরা খাদ্য-পানির অভাবে মারা যাচ্ছে।’ ‘এটা একটি দুঃসহ পরিস্থিতি এবং চাইলেই এটি এড়ানো সম্ভব। সূত্র : রয়টার্স