লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা আজ ঢাকা সফরে আসছেন। এই সফর ঘিরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যুক্ত হতে চলেছে। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। সুবিধাগুলোর মধ্যে থাকছে- শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ : ব্রাজিলে বাংলাদেশ প্রধানত পোশাক শিল্পপণ্য রপ্তানি করে থাকে। তবে পোশাক শিল্পপণ্যের জন্য ব্রাজিলে ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্রাজিলকে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্রাজিলকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে সে আলোচনায় কোনো গতি পায়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের সফরে শুল্কমুক্ত সুবিধা উত্থাপিত হবে। ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য দিনে দিনে বাড়লেও সেটা ভারসাম্যহীন। ব্রাজিলে বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার চেয়ে ৭ গুণ সে দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্রাজিলে তৈরি পোশাক, ওষুধ, পাট, সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে থাকে। আর ব্রাজিল থেকে বিপুল পরিমাণ তুলা, চিনি, সয়া, সয়াবিন তেল আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে বছরে বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। সে কারণে বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে চায় বাংলাদেশ। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ২৪ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে। তাদের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে- ক্রীড়া সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক, কৃষি খাতে সমঝোতা স্মারক ও কারিগরি সহযোগিতা স্মারক। ব্রাজিল বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ গরুর মাংস রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের ১২৬টি দেশে গরুর মাংস রপ্তানি করে থাকে দেশটি। বাংলাদেশেও দেশটি গরুর মাংস রপ্তানি করতে চায়। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলার (৪৯৫ টাকা) দরে দিতে আগ্রহী দেশটি। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল আসছে, সেখানে বেশ কয়েকজন মাংস রপ্তানিকারকও আছেন। সফরকালে বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। ফুটবল খেলায় ব্রাজিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সে কারণে ব্রাজিলের কাছ থেকে ফুটবল খেলায় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা নিতে চায় বাংলাদেশ। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ফুটবল খেলায় সহযোগিতা নিয়ে একটি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা করছেন নীতি নির্ধারকরা। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, এই সফরের মধ্য দিয়ে শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন নয়, দক্ষিণ আমেরিকায় বাংলাদেশের বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস জানিয়েছেন, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। প্রথমবারের মতো ব্রাজিল থেকে কোনো উচ্চ পর্যায়ের সফর হবে এটি। এ সফর হবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাইলফলক। এর মাধ্যমে সম্পর্ককে আমরা মজবুত করতে পারব।