ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজশাহীতে দেখা মিলছে আমের গুটির

রাজশাহীতে দেখা মিলছে আমের গুটির

রাজশাহীর গাছে গাছে এখন মুকুল ফোটে বের হয়েছে গুটি গুটি আম। ফলে আমকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহীর আমের খ্যাতি সারাদেশে। আমের মৌসুমে ব্যবসা হয় জমজমাট। ব্যবসা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আম গাছে কম মুকুল এসেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম উৎপাদক ও চাষিরা। মুকুলের মণ্ডম ঘ্রাণ এখন আকাশে-বাতাসে। চৈত্রের প্রখর তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুকুল থেকে গুটি আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জেলার বাঘা উপজেলার গাছগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুটি এসেছে। এ অবস্থায় গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর- এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। গত বছর এই অঞ্চলে মোট ১২ লাখ সাত হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়েছিল। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। গত বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হয়েছিল। এর আগের বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল।

গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন। হিসাবে প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়ছে। এবারও উৎপাদন বাড়ার আশা করছেন তারা। রাজশাহী জেলার বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। চারঘাট ও বাঘার কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুকুলে আমগাছের পাতা ঢেকে আছে। প্রতিটি গাছে ব্যাপক মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলগুলোতে গুটি এসে বড় হতে শুরু করেছে। সেগুলোর পরিচর্যা করছেন চাষিরা।

চাষিরা জানান, প্রতিটি গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলগুলোতে গুটি আসতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে আশ্বিনা, ফজলি ও দুধসর এবং হিমসাগরের গুটি আসবে। এরই মধ্যে এগুলোর কিছুতে গুটি এসেছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনেক ভালো।

পোকামাকড় যেন গাছে ভিড়তে না পারে, সেজন্য ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, চব্বিশনগর ও দরগাপাড়া এলাকার আম বাগানগুলোয় কয়েকটি গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। চাষিরা এই পর্যায়ের ফলকে ‘গুটি’ বলে থাকেন। দরগাপাড়া গ্রামের আমচাষি শামীম আখতার বলেন, আমাদের গ্রামের কিছু গাছে গুটি এসেছে। কিন্তু ৪০ শতাংশ গাছে মুকুল আসেনি। কিছু গাছের মুকুল ফল না ধরেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এ বছর পরাগায়নের জন্য এখনো যথেষ্ট মৌমাছি দেখা যায়নি বলে জানান তিনি। বাঘা উপজেলার আম উৎপাদক শফিকুল ইসলাম রপ্তানিকারকদের জন্য আম সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, ৩০০ বিঘা জমির আম বাগানে ৫০ শতাংশ গাছে মুকুল আসেনি। আবহাওয়ার জন্যই এরকম হয়েছে। আম গ্রীষ্মকালের ফল হলেও কিছুদিন আগেও শীত রাতে বেশ শীত অনুভব হচ্ছিল। বিগত বছরের চেয়ে এবার আমের মুকুল ভালো এসেছে এবং আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলন হবে বলে জানিয়েছেন বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান। তিনি বলেন, উপজেলায় আট হাজার ৩৬৮ হেক্টর আম বাগান রয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ বাড়ানো হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ১ লাখ ১০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে উপজেলায়। আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা-ইনস্টিটিউটের (বারি) অবসরপ্রাপ্ত-প্রধান বৈজ্ঞানিক-কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, গ্রীষ্মকালীন ফল আম উচ্চ তাপমাত্রা পছন্দ করে। তবে চাষের সময় খুব বেশি তাপমাত্রা ভালো নয়। মুকুল ও গুটি আসার সময়ের আদর্শ তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু বর্তমানে দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাচ্ছে ও রাতের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির আশপাশে নেমে যাচ্ছে। এই চরম ওঠানামা মুকুল ও গুটির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমের পরাগায়নে সহায়ক মাছি, প্রধানত সিরফিড মাছি শুধু গ্রীষ্মকালেই দেখা দেয়। চাষিরা সিরফিড মাছিকে একই রকম চেহারার জন্য মৌমাছি বলে ডাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত