চৈত্রের খরতাপে যানজট আর ভোগান্তি এড়াতে কর্মব্যস্ত শহর রাজধানী ছেড়ে পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে গ্রামে ফিরছে মানুষ। এতে প্রায়ই দীর্ঘ যানবাহনের সারি তৈরি হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকায়।
গতকাল ভোর ৪টা থেকে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনসহ মোটরসাইকেলের দীর্ঘসারি তৈরি হয় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পরে পর্যায়ক্রমে যানবাহনের ভিড় বাড়ে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায়। এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ধীরগতিতে থেমে থেমে চলে যানবাহন। পরে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করে পরিস্থিতি। তবে এর আগে তীব্র যানজটে সেতু পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে যাত্রীদের।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের বাকি আছে আর মাত্র ৩ দিন ফলে, এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ৭টি টোল বুথে যানবাহনের টোল আদায় করা হচ্ছে, তবে মোটরসাইকেলের বাড়তি চাপ থাকায় আলাদা লেন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে সেতু নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা কর্মীরা। অন্যদিকে ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় এড়াতে ও ওভার ট্রাকিং বন্ধে স্পিডগানের মাধ্যমে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা।
তবে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের অভিযোগ ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের টোল আদায় কার্যক্রম ধীর গতিতে চলায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের। তবে তুলনামূলক তেমন ভোগান্তি নেই পদ্মা সেতু টোল প্লাজা এলাকায়। ফলে কিছুটা ভোগান্তি থাকলেও এবারের ঈদ যাত্রা অন্যান্য বারের চেয়ে কিছুটা স্বস্তিদায়ক রয়েছে এখন পর্যন্ত বলে মন্তব্য তাদের।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল ম্যানেজার আহমেদ হক জানান, যেহেতু সরকারি-বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এখনো গার্মেন্টস ছুটি হয়নি, তাই বড় ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়াই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই যাত্রীসহ যাতায়াত করছে বিভিন্ন যানবাহন। তবে আজ সকাল থেকেই যানবাহনের বাড়তি চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এবার ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তি নিরশনে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের।
এদিকে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাঞ্চন কুমার সিংহ জানান, যানজট নিরসনে এবার বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মহাসড়কে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকার ঘটনা এড়াতে যাত্রীদের নিরাপত্তা স্বার্থে বিভিন্নভাবে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিসিটিভির মাধ্যমেও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে পরিস্থিতি।
তিনি আরো বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ, ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু ঈদের আর মাত্র তিন দিন বাকি আছে ফলে, গভীর রাত থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত যানবাহনের দীর্ঘসারি তৈরি হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেটি স্বাভাবিক হয়ে আসে, তবে সারাদিন থেমে থেমে যানবাহনের চাপ অব্যাহত থাকে এক্সপ্রেসওয়েতে এতে সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। তবে এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের টোল আদায়ে ধীর গতির প্রসঙ্গে মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজা জানান, যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে মহাসড়কে টোল আদায়ের কার্যক্রম, টোল বুথের সংখ্যা কম থাকায় কিছুটা ধীর গতি তৈরি হয় যানবাহন চলাচলে। তবে শিগগিরই আরো টোল বুথ ও জনবল বৃদ্ধি করা হবে। যেহেতু পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পরে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিনিয়ত যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই সার্বিকবিষয় বিবেচনা করে আগামীদিনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে এবার ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তি নিরসনে ও ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শিগগিরই আধুনিক পদ্ধতিতে স্মার্ট টোল আদায় পদ্ধতি চালু হলে প্রায় শতভাগ ভোগান্তি নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।