কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে এবার অনুষ্ঠিত হবে ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত। প্রতিবছর এ ঈদগাহ মাঠে আশপাশের জেলা ছাড়া দেশ-বিদেশ থেকে কয়েক লাখ মুসুল্লি ঈদের জামাতে অংশ নেন।
ঈদের দিন সকাল ১০টায় একটি মাত্র জামাতের জন্য এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। ঈদ জামাতকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
গতকাল সকাল ১১টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সবশেষ তুলির আঁচড়ে রংয়ের প্রলেপ ছুঁয়ে যাচ্ছে ঈদগাহ মাঠের সীমানা প্রাচীরে। নামাজের সময় মুসুল্লিদের কাতার সোজা করার জন্য দাগ কাটাও শেষ।
প্রতি বছর এভাবেই কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাতের জন্য নেওয়া হয় ব্যপক প্রস্তুতি। এবারও সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে স্থানীয় এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসুল্লিদের কথা মাথায় রেখে। দেশ-বিদেশের তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মুসুল্লি শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ পড়েন। বংশ পরম্পরায় এ মাঠে নামাজ পড়েন দেশের বিভিন্ন জেলার মুসুল্লিরা। এক সপ্তাহ আগে থেকেই মুসুল্লিরা চলে আসেন ঈদের জামাতে অংশ নিতে। মাঠে আসা কয়েকজন মুসুল্লি বলেন, ‘বাপ-দাদারাও এ মাঠে নামাজ পড়েছে, আমরাও সেই ধারাবাহিকতায় নামাজ পড়ছি। এ মাঠে ঈদ জামাতে কয়েক লাখ লোক নামাজ পড়েন। কারো না কারো উছিলায় আমাদের আল্লাহ মাফ করে দিবেন, সেই আশা নিয়ে এ মাঠে নামাজ পড়ি। তাছাড়া দেশ-বিদেশের মানুষজন আসেন। তাদের সাথে কোলাকুলি করি, পরিচিত হই। আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করে ঈদের দিন সকালে এ মাঠে।’
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের নামাজ চলাকালীন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গিদের অতর্কিত হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয় চারজন। সেই থেকে ঈদের জামাতে বাড়তি নিরাপত্তার উপর জোর দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার ঈদগাহ পর্যবেক্ষণের জন্য ৬টি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি ড্রোন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে জেলা শহরসহ ঈদগাহ মাঠ। জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ আরও জানান, ‘চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হয়েছে ঈদ জামাতকে ঘিরে। শুধু মাঠ নয়, পুরো জেলা শহরই থাকবে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা।’
জায়নামাজ ছাড়া কোনকিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ না করার জন্য মুসুল্লিদের উৎসাহিত করছে জেলা প্রশাসন। বরাবরের মতো দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চলবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ আরো জানান, ‘দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসুল্লিদের কথা মাথায় রেখে আমরা সকল পরিকল্পনা সাজিয়েছি। মোট কথা, ঈদের জামাত আদায়ের আগে-পরে মুসুল্লিদের সকল সুবিধার জন্য আমরা প্রস্তুত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত হবে পরিচ্ছন্ন এবং সুখকর পরিবেশে।’
জানা যায়, ১৮২৮ সালে প্রথম ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে এ মাঠে প্রথম সোয়ালাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’। পরবর্তীতে যা শোলাকিয়া নামে পরিচিতি পায়।