ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এমভি আব্দুল্লাহ জিম্মিকাণ্ড

চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জিম্মি নাবিকরা

চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জিম্মি নাবিকরা

ভারত মহাসাগরে জিম্মি হওয়া জাহাজ ‘আবদুল্লাহ’য় অবস্থানরত ২৩ নাবিকরা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় মাসখানেক জিম্মিদশা ও একত্রে গাদাগাদি করার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, জাহাজে খাবার সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও স্বাদু পানির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। সংরক্ষিত পানি যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায় এ কারণে রেশনিং করে পানির ব্যবহার করতে হচ্ছে। সপ্তাহে মাত্র এক দুইবারের বেশি গোসল করার সুযোগ পাচ্ছেন না। জাহাজে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধপত্র ছিল সেগুলো ফুরিয়ে গেছে। অপরদিকে দিন-রাত অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহারায় থাকছে দস্যুরা। তবে দীর্ঘদিন থাকার কারণে নাবিকদের সঙ্গে দস্যুদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ কারণে নাবিকদের এখন আগের মতো নির্যাতন করছে না। থাকতে দেওয়া হচ্ছে নিজ নিজ কেবিনে। পাশাপাশি জাহাজের নিয়মিত কাজও করছেন নাবিকরা। স্বজনদের এসব কথা বলেছেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অয়েলার পদে কর্মরত শামসুদ্দিন। শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি বদরুল ইসলাম বলেন, শামসুদ্দিন এখন একদিন দুই দিন পর পর আমাদের কাছে ফোন করেন। তারা ভালো আছেন। জাহাজে রক্ষিত খাবার এখনও মজুত আছে। তবে কমে এসেছে। এখন দস্যুরা আর নাবিকদের থেকে খাচ্ছে না। তারা উপকূল থেকে দুম্বা-খাসিসহ অন্যান্য খাবার নিয়ে আসছেন। দস্যুরা তাদের সংগ্রহ করা খাবার খাচ্ছেন। আবার নাবিকরা চাইলে তাদের খেতে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, কবে এই জিম্মি দশা থেকে নাবিকরা মুক্তি পাচ্ছেন তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। আমাকে ফোনে বলেছেন, জাহাজ মালিক বা এসআর শিপিংয়ের পক্ষ থেকে তাদের মুক্তির বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে যাতে খোঁজ নিই। এরইমধ্যে আমি এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন নাবিকদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, সব নাবিক সুস্থ আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দস্যুদের সঙ্গে আমাদের আলোচনার অগ্রগতি আছে। আশা করছি যেকোনোও সময় নাবিকরা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবেন।

এদিকে, সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান জানান, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের অধিকাংশ নাবিকই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কাছে নেই ওষুধপত্র। পানির সংকট মারাত্মক হয়েছে। সপ্তাহে মাত্র দুয়েকবার স্বাদু পানি পেলেও বাকি সময় সমুদ্রের লোনা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জিম্মি নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে জাহাজ মালিকপক্ষের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, সে বিষয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে দস্যুদের সঙ্গে কোনো একটা সমঝোতা হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে। কেন না, তাদের আচরণ নমনীয় হয়েছে। এখনও অনেক প্রক্রিয়া বাকি। প্রথমে সমঝোতা হবে। এরপর তাদের কথা অনুযায়ী মুক্তিপণের টাকা পৌঁছাতে হবে। টাকা পাওয়ার পর নাবিকদের মুক্তি মিলবে। নাবিকরা সেখান থেকে কোনো বন্দরে যাওয়ার পর জাহাজটিতে নাবিকদের নতুন সেটআপ দেওয়া হবে। এরপর বিমানযোগে তারা দেশে ফিরবেন। বিষয়টি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত এক মাস কিংবা আরো বেশি সময় লাগতে পারে। প্রসঙ্গত, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এস আর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। অর্থাৎ ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত করা হয় এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার ও প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর নামও পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘এমভি আব্দুল্লাহ’।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত