নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘ মহাসচিব

মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংসাত্মক সংঘাতের মুখে : ফেরানোর দায়িত্ব সবার

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য খাদের কিনারে। এ অঞ্চলের মানুষ একটি পূর্ণমাত্রার ধ্বংসাত্মক সংঘাতের মুখোমুখি। তারা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এখনই সময় তাদের খাদের কিনার থেকে ফিরিয়ে আনার। আর এ দায়িত্ব যৌথভাবে সবার।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি সভার শুরুতে গত রোববার বিকালে দেওয়া ভাষণে গুতেরেস এসব কথা বলেন। ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের হামলা নিয়ে এ সভা শুরু হয়। এতে স্ব স্ব দেশের অবস্থানের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েল ও ইরানের রাষ্ট্রদূতরা।

গুতেরেস তার বক্তব্যে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দিকের বড় বড় সামরিক পক্ষগুলো সংঘাতে জড়িয়ে যেতে পারে- এমন যে কোনো পদক্ষেপ উপেক্ষা করা জরুরি। ইতিমধ্যে গাজার বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। তাই এখনই সময়, সবাইকে যুদ্ধের কিনার থেকে ফিরে আনার।

গুতেরেস বলেন, ইরান-ইসরায়েল-গাজা সংঘাত যাতে আবার উসকে না যায়, তা প্রতিরোধে সবার দায়িত্ব রয়েছে। সবাইকে সক্রিয়ভাবে এই দায়িত্ব পালনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।

সবার যৌথ অংশগ্রহণে এখনই গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রয়োজন উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, সেখানে মানবিক অবস্থা বিপর্যস্ত। এজন্য সব জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি ও বাধাহীনভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দেওয়া দরকার। গুতেরেস তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে সংঘাত বন্ধ ও লোহিত সাগরে নৌ-যান চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক করা নিয়েও কথা বলেন। বিশ্বে শান্তি স্থাপনে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর যৌথ দায়িত্ব থাকার কথা উল্লেখ করে গুতেরেস আরো বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তার অবস্থা প্রতি ঘণ্টায় অবনতি হচ্ছে। এ অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) বা বিশ্বের কেউ আর যুদ্ধ চায় না।

জাতিসংঘের মহাসচিব তার বক্তব্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক অখণ্ডতার ওপর আক্রমণে জাতিসংঘের সনদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন। ইরান-ইয়েমেনের ৮৬ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড গত শনিবার ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করতে সহায়তা করেছে।

নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। আকাশপথে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে চালানো এই হামলা অনেকাংশেই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল। আর এই কাজে ইসরায়েলকে বেশ ভালোই সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার সময় ইরান ও ইয়েমেনের ৮৬টি ড্রোন এবং ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে মার্কিন বাহিনী। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানিয়েছে. ইউএস ইউরোপীয় কমান্ড ডেস্ট্রয়ারদের সমর্থন নিয়ে মার্কিন বাহিনী শনিবার এবং রোববার ইরান ও ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা ৮০টিরও বেশি একমুখী আক্রমণকারী ড্রোন এবং অন্তত ছয়টি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সেন্টকম বলেছে, এর মধ্যে লঞ্চার গাড়িতে থাকা একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথিদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উৎক্ষেপণের আগে মাটিতেই ধ্বংস করে দেওয়া সাতটি ইউএভি-ও রয়েছে। সিরিয়ার রাজধানীতে তেহরানের কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শনিবার গভীর রাতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইরান এই হামলা চালায়। যদিও বেশিরভাগ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারপরও উত্তেজনার আরো বৃদ্ধি হতে পারে বলে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। মূলত গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলে রাতারাতি ৩০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে তেহরান। এর বেশিরভাগই ইরানের অভ্যন্তর থেকে নিক্ষেপ করা হয়। তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপাতিত করেছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রবাহিনী। মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘ইরানের এই বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাকে সহায়তা করার জন্য সেন্টকম অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাড়াতে আমাদের সমস্ত আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যাব।’