ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং হামলা

ছেলেকে বাঁচাতে যাওয়া সেই চিকিৎসক আর নেই

ছেলেকে বাঁচাতে যাওয়া সেই চিকিৎসক আর নেই

সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ এলাকায় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত হন চিকিৎসক কোরবান আলী। কিন্তু গেল বুধবার (১০ এপ্রিল) ভোরে নগরীর জিইসি মোড় এলাকার বেসরকারি ‘মেডিকেল সেন্টার’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোরবান আলীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। কোরবান আলী পেশায় ছিলেন দন্ত চিকিৎসক। এই বেসরকারি হাসপাতালে তিনি টানা পাঁচ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা রানা জানান, মেডিকেল সেন্টারে তার বাবা এতদিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গত বুধবার ভোর ৬টা ৭ মিনিটে চিকিৎসকরা তার বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ হাসপাতালে আসার পর তার মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। নগরীর আকবর শাহ থানার ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় গত ৫ এপ্রিল বিকালে কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হন দন্ত চিকিৎসক কোরবান আলী (৬০)। এ ঘটনার পর তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এরপর চিকিৎসার জন্য তাকে নগরীর জিইসি মোড় এলাকা ‘মেডিকেল সেন্টারে’ আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এতদিন তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তার বাসা ফিরোজ শাহ কলোনিতে। ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় তার একটি ডেন্টাল ক্লিনিক ছিল।

পুলিশ জানায়, দুই মাস আগে কয়েকজন স্কুলছাত্রকে মারধর করতে দেখে ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশ ডেকে আনার ঘটনায় কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজার সঙ্গে বিরোধ হয় এলাকার কিশোর গ্যাং সদস্যদের। বিরোধের জেরে গত ৫ এপ্রিল বিকালে রেজাকে মারধর করতে দেখে ছেলেকে বাঁচাতে ছুটে যান কোরবান আলী। এ সময় কিশোররা তার ওপর হামলা করে। তার উদ্দেশে নিক্ষেপ করা ইটের কারণে মাথায় মারাত্মক আঘাত পান তিনি। এ সময় গুরুতর আহত কোরবান আলীকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে নগরীর জিইসি মোড় এলাকার ওআর নিজাম রোডে বেসরকারি মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। আকবর শাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা রানা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। হামলাকারীরা সবাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। স্থানীয়রা জানান, গ্যাং লিডার গোলাম রসুল নিশান আকবর শাহ এলাকার বাসিন্দা। তিনি একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। নিহত কোরবান আলীর সাথে তার কোনো পূর্বশত্রুতা ছিল না। বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েই তার মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষপদ রায় জানান, কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে কে বড় ভাই আর কে ছোট ভাই, সেটা বিবেচনা না করে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

গত বুধবার (১০ এপ্রিল) নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা প্রস্তুতি পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। সিএমপি কমিশনার জানান, কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকে আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে আমরা তিন এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি যারা ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল, তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। আমাদের হাতে ভিডিও ফুটেজ এসেছে। বাকি আসামিদের ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত সব আসামিকে ধরতে পারব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত