অন্যরকম
ডুবে যাচ্ছে কৃত্রিম দ্বীপের বিমানবন্দর!
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
২৯ বছর আগে ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণের জন্য দরজা খোলে জাপানের কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। জাপানের ওসাকা, কিয়োতো এবং কোবের মতো ব্যস্ত শহর থেকে নিকটতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এটি। জাপানের ওসাকা স্টেশন থেকে ৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ওসাকা বে’র ঠিক মাঝখানে দুটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি হয়েছে কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কিন্তু যে দুটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর বিমানবন্দর তৈরি করা হয়েছে, তা ক্রমশ সমুদ্রের তলায় ডুবে যাচ্ছে। এমনকি, মূল ভূখণ্ড থেকেও ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে এই বিমানবন্দর। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এরই মধ্যে কৃত্রিম দ্বীপের ৩৮ ফুটেরও বেশি ডুবে গিয়েছে। ২০৫৬ সালের মধ্যে আরো ১৩ ফুট সমুদ্রের তলায় ডুবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। দুটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর বিমানবন্দর তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি। কৃত্রিম দ্বীপ দুটি নির্মাণ করতে প্রথমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর ৫ ফুট উচ্চতার মাটি দেওয়া হয়। তার উপর ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২২ লাখ পাইপ গেঁথে দেওয়া হয়। জমির ভিত শক্ত করতে পাইপের ওপর মাটির সঙ্গে কাদা এবং বালি মেশানো হয়। ওসাকা বের ওপর তৈরি দুটি কৃত্রিম দ্বীপের জমি ভেজা স্পঞ্জের মতো ছিল। সেই জমি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তার পর বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৬০-এর দশকে টোকিয়ো শহরের সঙ্গে কানসাই এলাকার বাণিজ্যের কথা চিন্তা করে কোবে এবং ওসাকা শহরের কাছাকাছি একটি বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করে জাপান সরকার। প্রথমে ভাবা হয়েছিল ইটামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনর্নির্মাণ করে আরো বর্ধিত করা হবে। কিন্তু ইটামি এবং টোয়োনাকা শহরের কাছে এত উঁচু আবাসন রয়েছে যে, বিমানবন্দর তৈরির জন্য ফাঁকা জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। এমনকি সেখানকার বাসিন্দারাও আপত্তি জানাতে শুরু করেন। বিমানবন্দর তৈরি হলে শব্দদূষণ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি জানান তারা। তাই সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। কোবে শহরে নতুন বিমানবন্দর তৈরির চিন্তাভাবনা করা হলেও কোবে প্রশাসনের তরফে সেই প্রস্তাব খারিজ করা দেওয়া হয়। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর দুটি কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় জাপান সরকার। ১৯৮৭ সাল থেকে দ্বীপ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২৬০০ একর জমির ওপর কৃত্রিম উপায়ে দুটি দ্বীপ তৈরি করে তার ওপর তৈরি হয় কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ ১ হাজার ২৬০ একর জমির উপর তৈরি। দ্বিতীয় অংশটি ১ হাজার ৩৪০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে কৃত্রিম দ্বীপ দুটি ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়। সেতু নির্মাণের ৪ বছর পর কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয়। ১৯৯৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ভূমিকম্প হয় জাপানে। ভূমিকম্পের ফলে জাপানের হোনসু দ্বীপে ৬ হাজার ৪৩৪ জন মারা যান। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতিও হয়। কিন্তু কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গায়ে একটিও আঁচড় পড়েনি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ওই বিমানবন্দরের একটি কাচেও ফাটল পর্যন্ত ধরেনি। ১৯৯৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওপর ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। কিন্তু ঘণ্টায় ২১৬ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াও ক্ষতি করতে পারেনি বিমানবন্দরের। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফের ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে পড়ে কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড়ের সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, কয়েকটি বিমানের ইঞ্জিনের ভেতর জল ঢুকে যায়। বিমানবন্দরের ভেতর বহু যাত্রী আটকে পড়েন।
যে সেতুর মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বিমানবন্দরের যোগাযোগ ছিল সেই সেতুর ওপর একটি ট্যাঙ্কার আছড়ে পড়ে সেতুর কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। দুই দিন কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। শুধুমাত্র কিছু ঘরোয়া বিমানের উড়ানের অনুমতি দেয় জাপান সরকার। ঘূর্ণিঝড়ের এক মাস পর কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণভাবে চালু হয়। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিলের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হয়। ২০১৬ সালের গণনা অনুযায়ী কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোট ২ কোটি ৬০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। সেই সময় জাপানের তৃতীয় ব্যস্ততম এবং এশিয়ার ৩০ তম ব্যস্ত বিমানবন্দর হিসাবে নাম লেখায় কানসাই বিমানবন্দর। তবে কৃত্রিম দ্বীপের প্রতিনিয়ত ডুবে যাওয়ার ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে জাপান সরকারকে।