নীলফামারীতে ঘোড়ায় ঘোরে তেলের ঘানি

বৃদ্ধের জীবিকা নির্বাহ

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পারভেজ উজ্জ্বল, নীলফামারী

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জে তেলের ঘানিতে ঘোড়া লাগিয়ে তেল উৎপাদন করে পরিবারের হাল ধরেছেন ফজলে মামুদ নামের ৭৫ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ।

একসময় তেলের ঘানি টানার কাজে ব্যবহার করা হতো গরু। দিনে দিনে গরুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘানি শিল্প প্রায় আজ বিলুপ্তির পথে। ফজলে মামুদ (৭৫) নামের বৃদ্ধ স্বল্পমূল্যে ঘোড়া কিনে সেটা দিয়ে তেলের ঘানিতে লাগিয়ে টিকে রেখেছেন বাপ-দাদার তেল পেশা। তিনি কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি মৌজার তাঁতিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। জানা যায়, বর্তমান যুগে ঘোড়ার কদর কমে যাওয়ায়, মানুষের চাহিদা না থাকার কারণে বাজার মূল্যে খুবেই কম। তাই গরুর বদলে ঘোড়া ব্যবহার করে তিনি কয়েক বছর ধরে ঘোড়া দিয়ে ঘানি টেনে তেল বিক্রি করে পাঁচ সদস্যর সংসার চালিয়ে আসছেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘানির ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে খাঁটি সরিষা তেলের সুগন্ধ আশপাশ ছড়িয়ে পড়েছে। পাটকাঠির ছাউনির একটি ঘরে, কাতারের ওপর বসে ভর দিচ্ছেন নিজে। আর ঘোড়ার ঘুরপাকে পাতিলে চুয়ে চুয়ে তেল পড়ছে। ইলেকট্রনিক মেশিনের তেলের চেয়ে ঘানির তেলের অনেক চাহিদা রয়েছে।

ফজলে মামুদ বলেন, বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে প্রায় ৬০ বছর ধরে ঘানিতে তেল মাড়াই ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি। আগে গরু দিয়ে সরিষা মাড়াই করতেন, কিন্তু ঘানি টানার জন্য বর্তমান বাজারে গরুর দাম প্রায় লক্ষাধিক টাকার উপর। এত টাকা না থাকায়, কয়েক বছর আগে ৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া ক্রয় করেন তিনি। প্রতিদিন এই ঘোড়া দিয়ে ৪০ কেজি সরিষা মাড়াই করে প্রায় ১৯ কেজি তেল ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করি। সবকিছু খরচাদি বাদে প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় হয়, তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চালাই। বর্তমানে সরিষার দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কম হচ্ছে বলে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৃদ্ধ ফজলে মামুদ।

স্থানীয় বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, আমরা ফজলে মামুদের সরিষার তেল বাড়ির সব কাজে ব্যবহার করি। এই তেলের স্বাদ অতুলনীয়। এ বিষয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আবু বকর সাইফুল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বল্প সময়ে মানুষ অধিক উৎপাদন করতে যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছে আর এই কারণের জন্য, ঘানি শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রের ছোঁয়ার প্রভাবে ঘোড়ার ব্যবহার হারিয়ে গেছে সেই কবে, এমনকি গরুও। তবে গরুর বদলে ঘানিতে ঘোড়া ব্যবহার করে ঘানির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তিনি, তাতে কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রেখে শরীর এবং পরিবার দুটোই ঠিক রেখেছেন।