বাড়ছে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটকের সংখ্যা। বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনটি দেখতে যাচ্ছেন তারা। সড়কপথে সাতক্ষীরা দিয়ে সহজেই সুন্দরবনে প্রবেশের সুযোগ থাকায় এপথে পর্যটকদের আগ্রহ বেশি। তবে, দূরদূরান্ত থেকে সুন্দরবনে বেড়াতে এসে ভালো সড়ক যোগাযোগ ও আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাতক্ষীরা অংশে থাকা সুন্দরবন দেখতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের।
সুন্দরবন দেখতে আসা পর্যটকরা জানান, পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান হলে পর্যটকদের সংখ্যা বড়বে। সেই সঙ্গে প্রচুর রাজস্ব আয় করতে পারবে সরকার।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুর সুবিধা নিয়ে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অংশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু, সরকারি উদ্যোগ না থাকায় সেটি বিকশিত হচ্ছে না। বিশেষ করে, প্রচারণা না থাকায় এবং সরকারিভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকাকে এখনো পর্যটন এলাকা ঘোষণা না কারায় পিছিয়ে রয়েছে এখানকার পর্যটন খাত। এজন্য বড় বিনিয়োগে কেউ আগ্রহী হয়নি।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের একমাত্র অখণ্ড ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বাঘ, কুমির ও বানরসহ ৪৫৩ প্রজাতির বন্য প্রাণীর বাসস্থান এটি। তাই এই বনের প্রতি রয়েছে ভ্রমণপিপাসুদের প্রবল আকর্ষণ। বিশেষ করে শীত মৌসুমে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার ভিড় থাকে জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনীতে। এই দুই গ্রাম দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমান পর্যটকরা।
গত অর্থবছরে ৫২ হাজার ৭০০ পর্যটক সাতক্ষীরা রেঞ্জ দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন, যার মধ্যে ১২৮ জন বিদেশি ছিলেন। গত অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকা। এই অর্থবছরের পাঁচ মাসে প্রায় ২০ হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন, যা গতবারের একই সময়ের চেয়ে ২ হাজার বেশি। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকে। কোনো পর্যটক বা জেলে-বাওয়ালি এ সময়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেন না। সরেজমিন দেখা যায়, সুন্দরবনের কলাগাছি ও দোবেকি পর্যটন স্থানে যেতে মুন্সীগঞ্জ পয়েন্টে ভিড় করেছিলেন পর্যটকরা। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও বুড়িগোয়ালিনী এলাকার নীলডুমুর ও কদমতলা থেকেও সুন্দরবনে যাওয়া যায়। তবে ওই দুটি স্থানে ভিড় কম ছিল। ঢাকার গুলশান থেকে আসা ফাইম হোসেন, শারমিন সুলতানা সোমা, শাহানা মুন বলেন, আমরা ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে সুন্দরবনে যাব বলে এসেছি। প্রাইভেট কার কোথায় রাখব, নিরাপদ সে জায়গা এখানে নেই।
সাভারের রুপকুর রহমান বলেন, সুন্দরবন উপকূলে ভালো মানের হোটেল-মোটেল নেই। রাস্তার অবস্থাও খুব ভালো নয়। ভালো আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট থাকলে পর্যটক দ্বিগুণ হতো এই সড়ক পথে। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ আবু সুফিয়ান, শহিদুল ইসলামসহ একাধিক ট্রলার মালিক বলেন, দীর্ঘদিন মুন্সীগঞ্জ দিয়ে ট্রলারে ওঠার জন্য পন্টুন ছিল না। অনুরোধ করতে করতে একটি পন্টুন পেয়েছি। অন্য দুই জায়গায় এখনো পর্যটকদের ট্রলারে তুলতে পন্টুন নির্মাণ করা হয়নি। সুন্দরবন-সংলগ্ন আকাশ নীলা ইকো ট্যুরিজমের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন হাজারও দর্শানার্থী প্রবেশ করছেন এখানে, যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ঈদের ছুটিতে সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢল নেমেছে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) ইকবাল হুছাইন চৌধুরী বলেন, আসলে সুন্দরবন সংরক্ষিত এলাকা। এখানে পর্যটনের ক্ষেত্রে কিছুটা বিধিনিষেধ মানতে হয়। চাইলাম আর ঢুকে গেলাম এই ধরনের ব্যাপার কিন্তু নেই। সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার বিষয়টি কিছু আলাপ-আলোচনার মধ্যে রয়েছে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে যতটুকু সম্ভব, পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত করা যায়। তিনি আরো বলেন, আমরা অবকাঠামোগত সুবিধা থেকে পিছিয়ে আছি, এটা সত্য। সরকারিভাবে একটি রিসোর্ট আমরা করেছি। বেসরকারিভাবে কয়েকটি হোটেল রয়েছে। তবে সেটা যথেষ্ট নয়। আমরা পর্যটন করপোরেশনের কাছে চিঠি লিখেছি, যাতে তারা সেখানে হোটেল-মোটেল নির্মাণ করে। কয়েক বছরের মধ্যে সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক চার লেনের হয়ে যাবে।