ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত

অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার শপথ

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে রাজধানীর ঢাকা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে গতকাল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, গার্ড অব অনার প্রদান, কুচকাওয়াজ প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও মুজিবনগরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দলের সিনিয়র নেতারাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এছাড়া মুজিবনগর দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

মুজিবনগরে কর্মসূচি পালিত : গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, এরই মধ্যে ৮ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পরলে সাথে সাথে ওই মুক্তিযোদ্ধার সনদও বাতিল করা হবে। দ্রুততম সময়ে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্র নির্মাণকাজের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

দ্বিতীয় পর্বে সকাল ১০টায় শেখ হাসিনা মঞ্চে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, মুজিবনগর দিবস ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দিবসটি পালনে দেশব্যাপী আগের মতো কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তাই আগামী বছর থেকে সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি পালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সভাপতির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, আমাদের চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ থেকে আমরা দিবসটি পালন করি। এ সময় তিনি বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে যারা সম্প্রদায়িক শক্তির হাতে সপে দিতে চায় তাদের প্রতিরোধ করাই হোক আজকের মুজিবনগর দিবসের শপথ।’

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র খাইরুজ্জামান লিটন, শিশু ও মহিলাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম কামাল হোসেন। বিশেষ বক্তা ছিলেন মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক সাগর, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি, অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, পারভীন জামান কল্পনা ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জি প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি অর্কেষ্ট্রা দল ‘সোনালী স্বপ্নের দেশ’ নামের গীতিনাট্য পরিবেশন করেন, যেখানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন যৌথভাবে আয়োজন জাঁকজমকপূর্ণ করে। আগের দিন থেকেই নানা রং বে-রঙের ফেস্টুন, তোরণ স্থাপনা, রং এবং আলোকসজ্জা করা হয় গোটা মুজিবনগর কমপ্লেক্সজুড়ে। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের প্রসিদ্ধ শিল্পীরা। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ করে। পরে বৈদ্যনাথতলাকে ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাজউদ্দীন আহমদের ভাষণের মধ্যদিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।