ঢাকা ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আবারও হাইকোর্টে জামিন আবেদনের প্রস্তুতি মিন্নির

আবারও হাইকোর্টে জামিন আবেদনের প্রস্তুতি মিন্নির

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন আবারও প্রস্তুত করা হচ্ছে। চলতি বা আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন আবেদন জমা দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুজ্জামান শাহীন। এর আগে জামিনের জন্য করা আবেদনটি গত বছর হাইকোর্টের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) ছিল। ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের কার্যতালিকার ৪৯৭ নম্বরে ছিল, তখন মিন্নির জামিন আবেদন শুনানি হয়নি। এর আগে একই বছরের ১১ মে হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন শুনানি হয়নি। তারই ধারাবাহিকতায় শুনানির জন্য তালিকায় আসে। তারও আগে একই বছরের ৮ মে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হাইকোর্টে ফের জামিন আবেদন করেন।

এরও আগে গত বছরের (২০২৩ সালের) ১১ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মিন্নির জামিন আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন। এরপর একই বছরের ৮ মে আবারও আবেদন করেন মিন্নি।

আলোচিত এ মামলায় ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি ৬ আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার দণ্ডেও দণ্ডিত করেন। বাকি ৪ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

পরে নিয়ম অনুসারে একই বছরের ৪ অক্টোবর ৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছায়। পাশাপাশি ৬ অক্টোবর মিন্নিসহ অন্য আসামিরা আপিল করে।

আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন, তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়। এ আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মিন্নি জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজির সহযোগিরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।

এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো পাঁচ ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা। পরে ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন।

হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ওই বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

পরে একই বছরের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট মিন্নিকে জামিন দেন। ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক, দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন রয়েছেন। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে, বিচার শেষে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন বরগুনা জেলা নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। রায়ে ৬ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি তিনজনকে খালাস দেন আদালত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত