ভারতে সাত দফার লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে আজ

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারত। আজ থেকে আগামী ১ জুন পর্যন্ত মোট সাতটি ধাপে দেশটির ১৮তম সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির নির্বাচনে মোট প্রায় ৯৬ কোটি ভোটারই ৫৪৩টি লোকসভা আসন থেকে কারা পার্লামেন্টে যাবেন, তা বেছে নেবেন। ভারতের নির্বাচন কমিশন বলছে, এই ৯৬ কোটি ভোটারের প্রত্যেকের ভোটই অত্যন্ত মূল্যবান। তারা দেশের যে প্রান্তে যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, ভোটের বাক্সে তারা যেন নিজেদের মতামত খুব সহজে ও মসৃণভাবে দিতে পারেন; সেজন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখা হবে না।

অষ্টাদশ লোকসভার সাত দফা ভোটের প্রথম দফায় দেশের ১৭টি রাজ্য এবং চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ভোট হবে ১০২টি আসনে। এই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুঁড়ি কেন্দ্র। ২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গের ওই তিন কেন্দ্রসহ মোট ৪৫টিতে জিতেছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। লোকসভার পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশের ৬০ এবং সিকিমের ৩২টি বিধানসভা আসনের সবকটিতেই ভোটগ্রহণ হবে এই দফায়। আজ প্রথম দফায় অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং মেঘালয়ের দুটি করে আসনে ভোটগ্রহণ হবে। একটি করে আসনে ভোটগ্রহণ হবে ছত্তীসগড়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর, জম্মু ও কাশ্মীর, লক্ষদ্বীপ এবং পন্ডিচেরি। মণিপুরে মোট দুটি লোকসভা আসন। ইনার মণিপুর এবং আউটার মণিপুর। তবে নির্বাচন কমিশন আউটার মণিপুরকে ভাগ করে দুই দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ তাই আউটার মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর এবং চান্দেল জেলার ১৫টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। বাকি ১৩টিতে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে ২৬ এপ্রিল। পাশাপাশি বিহারের চার, উত্তরাখণ্ড এবং মহারাষ্ট্রের ছয়, উত্তরপ্রদেশের আট আসন, রাজস্থানের ১২ আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এই দফায় সবচেয়ে বেশি ভোটগ্রহণ হচ্ছে তামিলনাড়ুতে। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে ৩৯টি লোকসভা আসনের সবগুলিতেই ভোটগ্রহণ হবে প্রথম দফায়। মণিপুরের পাশাপাশি ছত্তীসগড়ের মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্চলেও ভোটের দিন নাশকতার আশঙ্কায় বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন। ভারতে নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসও বলছে, অতীতে তারা মাত্র একজন ভোটারের জন্য কিংবা দেশের প্রত্যন্ত কোনো প্রান্তে হাতেগানা কয়েকজন ভোটারের কাছে পৌঁছানোর জন্য যে পরিমাণ মেহনত করেছেন বা ঝুঁকি নিয়েছেন তা প্রায় চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। ভারতে দুর্গমতম এলাকায় এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য কমিশনকে পেশাদার ডুবুরি নিয়ে যেতে হয়। হাতির পিঠে চেপে অথবা গাধার ওপর মালপত্র চাপিয়ে বুথে যাওয়ার নজিরও বিরল নয়। আবার গভীর জঙ্গলের ভেতরে মাত্র একজন ভোটারের জন্য আলাদা ভোটকেন্দ্র তৈরি করার দৃষ্টান্তও ভারতে আছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম ভারতে কোনো সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে যেখানে শ্যামশরণ নেগি ভোট দেবেন না। অনেকেই হয়তো নামটির সঙ্গে পরিচিত নন। শ্যামশরণ নেগিকে ‘ভারতের প্রথম ভোটার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন পার্বত্য রাজ্য হিমাচল প্রদেশের দুর্গমকল্পা অঞ্চলের বাসিন্দা। ২০২২ সালের নভেম্বরে মাসে ১০৫ বছর বয়সে শ্যামশরণ নেগির মৃত্যু হয়। শতবর্ষী এই অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের মৃত্যুর পর প্রকাশ্য জনসভায় শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কল্পাতে তার গ্রামে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্যামশরণ নেগির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই বিরল সম্মানে তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়েছিল কারণ শ্যামশরণ নেগি সম্ভবত ভারতের একমাত্র নাগরিক যিনি এ যাবতকালে দেশটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সবগুলো সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।