রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিটের ৪০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, দেশের এত বড় একটি শিশু হাসপাতাল অথচ এখানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া আর কিছুই নেই। যার ফলে কার্ডিয়াক আইসিইউতে লাগা আগুন কার্ডিয়াক আইসিইউতে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, তদন্তের পর ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাবে।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ১টা ৫৫ মিনিটে কাজ শুরু করি। এখানে পানির ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় পাশের মানসিক হাসপাতালের রিজার্ভ থেকে পানি আনা হয়। ছিল না পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্ট।
তিনি বলেন, দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায়। তবে আমরা কোনো ভুক্তভোগীকে পাইনি। আগুন লাগার পরপরই আইসিইউতে থাকা সবাইকে সরিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বজনরা।
আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধারণা করছি- আইসিইউর ভেতরে এসি ছিল, সেটা থেকে হয়তো আগুন লেগেছে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।
আইসিইউতে থাকা এসি বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস
তিনি আরও বলেন, আগুনের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিছু ভালো আছে। পাশাপাশি আইসিইউ রুমে যে অক্সিজেন সংযোগ ছিল সেটি আগুনের কারণে পুড়ে যায়। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সময় লেগেছে। পরবর্তী সময়ে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় অক্সিজেন লাইনটি বন্ধ করা হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
শিশু হাসপাতালের পঞ্চম তলার কার্ডিয়াক আইসিইউতে লাগা আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে শিশু হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগুনের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে আছেন একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
তিনি বলেন, এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেবা চালু করা। আমাদের নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, ডিপিডিসি ও ফায়ার সার্ভিস চেক করে যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আমরা নিচতলার সেবা থেকেই চালু করতে চাই। এভাবে ধীরে ধীরে আমরা সকল ফ্লোরের সেবা চালু করতে চাই। সেবা শুরু করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু এখন বলতে পারছি না।
গত মঙ্গলবারও শিশু হাসপাতালে আগুন লেগেছিল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে আগুনের বিষয়টি বড় কিছু না। খাবার গরম করার চুলায় রোগীর স্বজনের কাপড়ে আগুন লেগেছিল। যা নার্সসহ স্টাফদের চেষ্টায় সঙ্গে সঙ্গে নিভানো হয়। আজকের (গতকাল) যে আগুন সেটির বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
আগুন যেন না লাগে, হাসপাতালের প্রস্তুতি ব্যর্থতা আছে কি না জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, হাসপাতালে দুই শতাধিক এসি রয়েছে। শীত শেষে গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি এসি সার্ভিসিং করা হয়। সেদিনের আগুনের পরেই আমাদের নার্সরা ফায়ার এক্সট্রিংগুইশার দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেছে। আজকের আগুনে ধোঁয়া বেশি হওয়ার কারণে সেখানে কেউ যেতে পারেনি। যার কারণে আমাদের ফায়ার এক্সট্রিংগুইশার ব্যবহার করতে পারিনি। ফায়ার সার্ভিসকে জানাতে হয়েছে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিস চলে আসায় কোনো হতাহত হয়নি। সবাই নিরাপদে আছে।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আগুন লাগার আগে হাসপাতালের আইসিইউতে যেসব শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দশটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করে আইসিইউ শিশুদের অক্সিজেনসেবা দেওয়া হচ্ছে। আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।