ঢাকার ধামরাই-সাভার-আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। এসব এলাকায় গত এক মাসে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছেন অন্তত চারজন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত জখম হয়েছেন একাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। এসব কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কার্যত কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। কিশোর গ্যাংয়ের নেতা ও হত্যাচেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি লাবু, মিজান, নয়ন-স্বপন ডাকাত, পাগলা লিখন ও খোরশেদসহ অন্যান্য গ্যাং সদস্য প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ধামরাই থানার চর রাজাপুর এলাকায় প্রকাশ্যে একাধিক নারী ও পুরুষকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টা চালায় স্থানীয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। তারা দুজন নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও তথ্য গোপন করে দ্রুত জামিন নেয় সন্ত্রাসীরা। পরবর্তীতে এলাকায় ফিরে আবারও তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। ইতোপূর্বে যাদেরকে হত্যার উদ্দেশে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম করে ছিল তাদেরকে আবারও হত্যার হুমকি দিচ্ছে গ্যাং লিডার লাবু-মিজান-নয়ন-পাগলা। এসবের প্রতিবাদ করায় এলাকায় নানা রকম মানহানিকর কুৎসা রটানোসহ জীবন নাশের হুমকিও দিচ্ছে গ্যাং লিডার লাবু-মিজান-নয়ন। বিষয়টি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান রিপন অবগত রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার সবচেয়ে কাছের উপজেলা ধামরাই ও সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের এমন দৌরাত্ম্যে এসব এলাকায় গত এক মাসে নিহত হয়েছে চারজন।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী বলেন, ধামরাই ও সাভার উপজেলার সর্বত্র অর্ধশতাধিক কিশোর অপরাধীসহ প্রায় তিন শতাধিক উচ্ছৃঙ্খল কিশোর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক মাসে ধামরাই ও সাভার এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি থেকে পাকিজা মোড় পর্যন্ত এবং চৌহাট ইউনিয়নের পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য মারাত্মক আকার ধারন করেছে। ছিনতাই খুন-খারাবি ও রাহাজানির মতো গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে।
কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে রাতের বেলায় রাস্তায় বের হতে ভয় পাচ্ছে এলাকার মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা বিভিন্ন ধরণের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এদের উৎপাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পুরো এলাকার মানুষ। উঠতি বয়সি সব সন্ত্রাসীর হাতে রয়েছে বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র। সচেতন মহলের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করলেও সন্ত্রাসীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
এদিকে জমির কাগজপত্র জালিয়াত চক্র, ভুমিখেকো, নারী নির্যাতনকারী ও কুখ্যাত কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী, ধামরাই থানায় ৩১ নম্বর মামলার আসামি মিজান, লাবু, নয়া, ডাকাত পাগলা সন্ত্রাসী গংদেরকে জামিন বাতিল করে অভিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে ঢাকার ধামরাই প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল নির্যাতিত পরিবারের সদস্য ও রাজাপুর মধ্যস্থ চেরাগী জামে মসজিদ রক্ষা কমিটি, চররাজাপুর, চৌহাট-ধামরাই, ঢাকার সর্বস্তরের জনগণ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে বলা হয়েছে রাজাপুর মধ্যস্থ চেরাগী জামে মসজিদণ্ডওয়াক্ফ এস্টেটের নামে রেখে যাওয়া মরহুম মৌলভী ফজলুল করিম সিদ্দিকীর জমির কাগজপত্র জালিয়াতি করে তার বংশধর দেখিয়ে কিশোর গ্যাং নিয়ে জবর দখলকারী চর রাজাপুরের কুখ্যাত ডাকাত, পাগলা ওমহুরীনয়া মিজান এবং তার ছোট ভাই লাবুসহ অন্য আসামির পরিবারবর্গের আগ্রাসনে অবৈধভাবে জবরদখল করে জমির ফসল লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া এবং ধামরাই থানায় দায়ের করা মামলায় নারী নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা, ভাঙচুর ও লুটপাটের কুখ্যাত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।