পিবিআই পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন
সিরাজগঞ্জে ৭ বছর পর শিশু সুবর্ণা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন : গ্রেপ্তার তিন
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চলের শিমুলিয়া গ্রামের চাঞ্চল্যকর সুবর্ণা (৮) হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আট যুবক ও কিশোর পালাক্রমে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ ৭ বছর পর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হওয়ায় সুবর্ণার পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসেছে।। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো- ওই উপজেলার দত্তকান্দি গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে ছাব্বির হোসেন (২০), আরফান মেম্বারের ছেলে শাকিব খান (২১) ও বছির মেম্বারের ছেলে মিলন পাশা (২৭)। এদের মধ্যে ছাব্বির ও সাকিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকাল দুপুরের দিকে পিবিআই’র আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইএ’র পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম লোমহর্ষক এ ঘটনার তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ সকালে ওই চর থেকে সুবর্ণার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার বাবা শুকুর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে বাদী আদালতে নারাজি আবেদন দেন এবং এ মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে পিবিআই এ মামলার তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার ভিকটিমের ফুফাতো ভাই ছাব্বির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে ওই দিনই দত্তকান্দি শোলে বাজার থেকে শাকিব খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে এ ঘটনার মূল নায়ক মিলন পাশাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তার কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তার ছাব্বির ও শাকিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে তারা দত্তকান্দি হাইস্কুল মাঠে যায়। সেখানে সুবর্ণাকে তার ফুফাতো ভাই ছাব্বিরের সঙ্গে খেলতে দেখে। তখনই তারা তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে এবং এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন সন্ধ্যায় ছাব্বির ও শাকিব মিলে সুবর্ণাকে কৌশলে মধ্যশিমুলিয়ার চরে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই বাকি আসামিরা অবস্থান করছিল এবং তাকে আটজন মিলে পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার সময় সুবর্ণ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় আসামিরা নিজেদের বিপদের কথা ভেবে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়।
পুলিশ পরের দিন তার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং তার গোপনাঙ্গে রক্ত দেখে তা আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় তার পরনের পোশাকে সিমেন্সের নমুনা পাওয়া যায়। এতেই নিশ্চিত হওয়া যায় সুবর্ণাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনার সময় ছাব্বির, সাকিব ও অপর এক আসামির বয়স ছিল ১২ থেকে ১৩ বছর এবং বাকি আসামিরা যুবক ছিলেন। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই’র পুলিশ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।