সুসংবাদ প্রতিদিন
নীলফামারীতে হাইব্রিড তুলা চাষে সফলতা
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
রাস্তার পাশ দিয়ে গেলেই দেখে মনে হবে সবুজ ফুল বাগানের মধ্যে ফুটেছে সাদা গোলাপ। কিন্তু কাছে গিয়ে একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, সেটি কোনো ফুল নয়, কলি থেকে বের হয়ে আছে তুলা। মনোরম এ দৃশ্যের দেখা মিলবে নীলফামারী পৌরসভার টুপির মোড় এলাকায়। সে তুলা সংগ্রহ করে শুকানো হচ্ছে চাতালে। এরপর তা বস্তায় করে সরাসরি চলে যাবে কারখানায়, তৈরি হবে সার্জিক্যাল গজ-ব্যান্ডেজ।
এই তুলা চাষ করে অনেকটাই খুশি চাষি এবিএম গোলাম মোস্তফা। দ্বিতীয় বারের মতো হাইব্রিড জাতের এই তুলা চাষ করে তিনি সফলতা পেয়েছেন। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আগামী মৌসুমে এই তুলা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন তিনিসহ স্থানীয় চাষিরা।
গত বছর রংপুরের তারাগঞ্জের একটি কোম্পানির সহযোগিতায় দেড় বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেন তিনি। প্রথমবার তুলা চাষে সাফল্যের পর এবার তিন বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন তিনি। প্রথমবারের তুলনায় এবার বেশি ফলনের আশা করছেন তিনি। তুলা চাষি এবিএম গোলাম মোস্তফা বলেন, গতবছর আমি দেড় বিঘা জমিতে চাষ করে তুলা পেয়েছিলাম ১৮ মণ, যার বাজার মূল্য ৮ হাজার টাকা করে হলে ৭২ হাজার টাকা হয় আর খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। এবার আমি তিন বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। এটাতে একটু সার লাগে সেচ ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। এ কীটনাশক ৫ থেকে ৬ বার স্প্রে করতে হয়। এবার আমার ফলন বেশি হবে গত বছরের তুলনায়। এরপর আমি চার থেকে পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করতে পারি। এই তুলা দিয়ে লেপতোশক হবে না। এটা দিয়ে হাসপাতালের সার্জিক্যাল গজ-ব্যান্ডেজ ও কাপড় তৈরি করার সুতা হবে। এই জমিটা আমার পতিত ছিল। আর তুলাকে সাদা সোনাও বলা হয়। আমি পতিত জমিতে সাদা সোনা চাষ করেছি।
শুধু এবিএম গোলাম মোস্তফা নন, টুপির মোড় এলাকায় তুলাচাষে বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে আরো অনেক কৃষকর। বিঘাপ্রতি ১৬ থেকে ১৮ মণ হারে তুলার ফলন ও ন্যায্যমূল্য পেয়ে হাসি ফুটেছে চাষির মুখে। তুলা শুকানোর কাজ করা শ্রমিক আতিকুর রহমান বলেন, প্রতিটি গাছে ফল থাকে ৬০ থেকে ৭০টা। যখন ফলগুলো পাকতেছে তখন আমরা সেটা তুলে নিচ্ছি। এরপর তুলা গুলো চাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। চাতালে শুকানো পর বস্তায় করে পাঠানো হবে তারাগঞ্জের কোম্পানিতে। এই এলাকার কৃষক হামিদুর রহমান বলেন, এই জমিগুলো উঁচু হাওয়ায় তেমন ভালো আবাদ হয় না। আগামী মৌসুমে আমিও তুলা চাষ করব।
আরেক চাষি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এইটা নতুন ফসল। আমাদের এই জমিগুলোতে এগুলা আবাদ হচ্ছে দেখে ভালো লাগল। আমার নিজস্ব যে জমিগুলো আছে, সেগুলোয় আগামীতে আমিও তুলা চাষ করব
স্থানীয় বাসিন্দা জামিয়ার রহমান বলেন, জমিটা আগে পতিত ছিল। এলাকার সবাই এখানে খেলাধুলা করত। তবে যাদের জমি তারা উদ্যোগ নিল যে, তুলা চাষ করবে। এই তুলা চাষ আমরা আগে দেখিনি। আমার তুলা চাষ দেখে ভালো লাগছে। আসে পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই তুলা চাষ দেখতে মানুষ আসে। এদিকে, তুলার আবাদ বৃদ্ধি করতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস কৃষি বিভাগের। নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, তুলা একটি অন্যতম অর্থকারী ফসল। নীলফামারী সদর উপজেলায় দ্বিতীয়বারের মতো একজন কৃষক তুলা চাষ করেছেন। আমাদের নীলফামারীর মাটি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। যদি কোনো কৃষক তুলা চাষের করতে চান তাহলে যে সমস্ত কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকব।
পৌরসভা এলাকায় যে তুলাটি চাষ হয়েছে এটি দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা আশা করছি, অনান্য ফসলের মতো তুলা চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে দেশে তুলা চাষে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে বিভিন্ন প্রকারের হাইব্রিড জাতের তুলা। উঁচু, সু-নিষ্কাশিত ও সেচ সুবিধা রয়েছে- এমন জমিতে খুব সহজেই এ তুলা চাষ করা যায়। তুলার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে এটিকে সাদা সোনাও বলা হয়।