প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও অনুষ্ঠিত হচ্ছে জব্বারের বলীখেলা। এ উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ১২ বৈশাখ বলীখেলাকে (কুস্তি প্রতিযোগিতা) ঘিরে তিন দিনের বৈশাখি মেলা বসে। ওই তিন দিন কোতোয়ালি-সিনেমাপ্যালেস-আন্দরকিল্লা পর্যন্ত সড়কের ওপর পসরা সাজায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা উদ্যোক্তা, বেপারী, দোকানিরা। এরপরও অলিগলিতে চলে মেলার পসরা বিক্রি যতদিন না মজুত শেষ হয়। সবমিলে কেনাবেচা হয় কয়েক কোটি টাকার। আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখি মেলা কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ জানান, ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখি মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বলীখেলা আয়োজক কমিটির সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলীখেলা এবং বৈশাখি মেলা নিরাপদ করতে পুরো এলাকা শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা, মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেউ চাঁদা চাইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলা ২৬ এপ্রিল দিবাগত ভোর রাত পর্যন্ত মেলা চলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল বিকালে বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে। এবারে বলীখেলার পৃষ্ঠপোষক এনএইচটি হোল্ডিং লিমিটেড। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুব সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর ১৯০৯ সালে লালদীঘির পাড়ের বলীখেলার সূচনা করেন। করোনার কারণে দুই বছর বলীখেলা ও মেলা বন্ধ ছিল। পরে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় গত দুই বছর বলীখেলা ও বৈশাখি মেলার আয়োজন করা হয়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, সুঁই থেকে শুরু করে ফুলশয্যার খাট’ সন কিছুই পাওয়া যায় জব্বারের বলীখেলার বৈশাখি মেলায়। এবার আনুষ্ঠানিক মেলা শুরুর বেশ কয়েক দিন আগেই ঢাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ট্রাকে ট্রাকে পণ্য নিয়ে এসেছেন। হৃদয়কাড়া মৃৎশিল্প, কুটির শিল্প, গ্রামীণ নানা পণ্যসামগ্রী দেখেই ভিড় করছেন ক্রেতারাও। সুঁই থেকে ফুলশয্যার খাট’ কী থাকে না জব্বারের বলীখেলার বৈশাখি মেলায়! এবার আনুষ্ঠানিক মেলা শুরুর বেশ কয়েক দিন আগেই ঢাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ট্রাকে ট্রাকে পণ্য নিয়ে এসেছেন। হৃদয়কাড়া মৃৎশিল্প, কুটির শিল্প, গ্রামীণ নানা পণ্যসামগ্রী দেখেই ভিড় করছেন ক্রেতারাও। দরকষাকষির মাধ্যমে শুরু হয়েছে বেচাকেনাও। বলা হয়ে থাকে, এ জনপদের গৃহস্থরা জব্বারের বলীখেলার মেলার থেকেই এক বছরের টুকিটাকি কেনেন। সরেজমিন দেখা গেছে, লালদীঘির পেট্রল পাম্প, জেলা পরিষদ মার্কেট চত্বর, সিনেমা প্যালেস থেকে হাজারী গলির মুখ পর্যন্ত মাটির তৈজসপত্র, শোপিস, ফুলদানি, হাতি-ঘোড়া, মাটির ব্যাংকের বড় বড় স্তূপ। রং করার কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। প্রচণ্ড গরমের কারণে মাটির তৈরি পানির পাত্র, কলসি, জগ, গ্লাসের চাহিদা বেশি। চাহিদা রয়েছে মাটির ব্যাংক, পুতুল, দেবতার মূর্তি ও শোপিসের। মেলায় আসা এক ব্যবসায়ী জানান, সাভার, গাজীপুর ও ঢাকা থেকে মৃৎশিল্পসামগ্রী এনেছেন। ভঙ্গুর হওয়ায় পরিবহন ও উঠানো-নামানের সময় বেশ কিছু পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। অবিক্রীত পণ্য ফেরত নিতেও গাড়িভাড়া দিতে হয়। তাই আমরা কয়েক দিন আগেই চলে এসেছি, যাতে ধীরেসুস্থে গোছাতে পারি। তিনি আরো জানান, মেধাবী তরুণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত হওয়ায় বিশ্বমানের মৃৎশিল্পসামগ্রী তৈরি হচ্ছে দেশে। দেশি শৌখিন ক্রেতাদের পাশাপাশি বিদেশিদের কাছে এসবের কদর বাড়ছে। যদিও দাম একটু বেশি। কাচ, পাট, সুতো, বাঁশ, বেত, কচুরিপানা, কাঠসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি আকর্ষণীয় সব বাতি, শোপিস, আয়না, খেলনার দোকানগুলোতে দেখা গেছে তরুণ-তরুণীদের ভিড়। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে মৃৎশিল্প কলেজছাত্রী মায়মুনা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, প্রতি বছরই মেলায় আসা হয়। এবারের মেলায় অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র এসেছে। এসব দেখে ইচ্ছে হচ্ছে সব কিছুই কিনে ফেলি। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করেই নিতে হচ্ছে। তবে মেলা আনুষ্ঠানিক শুরুর আগে বলে বিক্রেতারা দাম বেশি হাঁকছেন। তবে মেলায় চাহিদার শীর্ষে রয়েছে তালপাতা, বেত, বাঁশ, কাপড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের হাতপাখা এবং ফুল ঝাড়ু। চন্দনাইশের একরঙা হাতপাখার দাম বেশি। তবে কদর বাড়ছে ওজনে হালকা এমন হাতপাখার। প্রতি জোড়া ভালো মানের হাতপাখার দাম হাঁকা হচ্ছে ৩০০ টাকা। বিভিন্ন মানের ফুলঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে প্রতি জোড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ফুলঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে আন্দরকিল্লা মোড়, জেনারেল হাসপাতাল গেইট, হাজারী গলির সামনে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে।
বিক্রেতারা জানান, বাঁশখালীসহ নগরের বিভিন্ন ছোট ছোট কারখানা থেকে ফুলঝাড়ু আসছে মেলায়। শীতলপাটি বিক্রি হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের সামনে। এর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে প্লাস্টিকের মাদুর। দামে কম হওয়ায় মাদুরই বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। যথারীতি বড় বড় আমসহ চারা বিক্রি হচ্ছে লালদীঘির উত্তর পাড়ে। শুধু আম নয়, বিভিন্ন ধরনের ফল, ফুল, ঔষধি গাছের চারাও বিক্রি হচ্ছে বেশ। সিনেমা প্যালেসের সামনে সস্তা কাঠের খাট, ওয়ারড্রোবসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। বেতের তৈরি আসবাবের দুইটি দোকান দেখা গেছে লালদীঘির মাঠ ঘেঁষে ফুটপাতে।