কারিগরি শিক্ষা বোর্ড

সনদ বাণিজ্যে চেয়ারম্যান দম্পতি এ কেমন বার্তা পেল জাতি

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শেখ কুতুব আলী

আমাদের দেশে যে কোনো চাকরির নিয়োগ দেয়ার আগে সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে পাবলিক পরীক্ষার সনদ পাঠানো হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সত্যতা যাচাই করার জন্য। সেখান থেকে সনদের সঠিক তথ্য বের হয়ে এলে কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রদানের কাজটি করে থাকে। যে বোর্ডকে সনদের সত্যতা যাচাই করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়, সেখান থেকেই যদি কারখানার মতো জাল সনদ বের হয়, তাহলে তো আফসোস করা ছাড়া আর কোনো কিছু করার থাকে না। বোর্ড থেকেই আসল-নকল যাচাই করা হয়। বোর্ড কর্তৃপক্ষ নকল সনদ বাণিজ্য বন্ধ করতে যা যা করা দরকার, সেটিও করে থাকে। অথচ তারাই যদি নকল সনদ বাণিজ্য করে, তাহলে জবাব দেয়ার আর কিছু থাকে না। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জালিয়াতি চক্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসে জাল সনদ বাণিজ্য করার সাহস দেখিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা হোক কিংবা দেশের উচ্চ প্রযুক্তিবিদ যাদের কথাই বলুন না কেন, তাদের মেধা ও বুদ্ধিতে কি কখনো এই ধরনের অভিনব চিন্তা এসেছে যে স্বয়ং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে জাল সনদ বাণিজ্য করা যেতে পারে। বোর্ডের চেয়ারম্যান পদধারী শীর্ষ কর্তা ব্যক্তি ও তার স্ত্রী মিলে এমন সনদ বাণিজ্যে অবতীর্ন হবেন- এমন কল্পনা আমাদের মধ্যে কেউ কোনো দিন করেছেন কি না, তা বলা মুশকিল। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া যে, এই চক্রটির সন্ধান পুলিশ পেয়েছে। না পেলে আজীবন নকল সনদ বাণিজ্য বের করে যেতেন বোর্ড চেয়ারম্যান দম্পতি। সময় যত গড়াচ্ছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনা মোড় নিচ্ছে ভিন্ন দিকে। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ। শুধু কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নয়, এই জালিয়াতিতে উঠে আসছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামও। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্ত সূত্র নাকি এ এমন তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী আকবরের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল ডিবিতে ডাকা হয় মো. আলী আকবরকে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান। ডিবি পুলিশ তাকে দুই দিনের সময় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি তিনি সেটা না করেন এবং পরবর্তীতে সনদ জালিয়াতির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

০হারুন অর রশীদ বলেন, সম্প্রতি আমরা রাজধানীর পীরেরবাগের পাইকপাড়ায় সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানের বাসায় অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। অভিযানকালে দেখা যায়, তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে হাজার হাজার কাগজ জাল সনদ তৈরির কারখানা তৈরি করেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে পাঁচজন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, কারিগরির চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনিও স্বীকার করেছেন। তিনি যে সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন সেটাও স্বীকার করেছেন। শামসুজ্জামান ও কারিগরির চেয়ারম্যানের স্ত্রী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা-নিয়ন্ত্রককে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা জানতে চেয়েছি, কারিগরির ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কীভাবে মাসের পর মাস ধরনের এ জালিয়াতি হয়েছে? তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠান চলে তার নির্দেশনা ও নেতৃত্বে। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ নিয়ে যাচ্ছে, সিসিটিভিতেও দেখা যাচ্ছে। তারপর কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। আবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও সার্টিফিকেটগুলোতে স্বাক্ষর করে গেছেন মাসের পর মাস।

হারুন বলেন, এসব কাজ চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অবহেলায় করেছেন নাকি স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছেন, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এমন জালিয়াতি জেনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। তখন চেয়ারম্যান ডিবি বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম ছিল। তাই নজরদারি করা সম্ভব হয়নি।’

সার্টিফিকেট কেনাবেচা হচ্ছে, সার্টিফিকেট বানানোর পর আবার ওয়েবসাইটেও আপলোড হচ্ছে; এতসব অনিয়মের পরও তিনি (কারিগরির চেয়ারম্যান) দায় এড়াতে পারেন কি না। স্ত্রীর বিষয়টিও তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। জানতেন না বলে দাবি করেছেন। হারুন বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নজিরবিহীন জালিয়াতির ঘটনা ইতিহাসে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কিত ও কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমি মনে করি, এ ঘটনার দায় কারিগরির চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না। কোনো সুযোগ নেই। আমরা এখন দেখব, তিনি আসলেই সনদ বিক্রির বিষয়টি জানতেন কি না? তার তো জানার কথা। তিনি তো আসল সার্টিফিকেট বিক্রির মাধ্যমে শিক্ষা ও জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন। তিনি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন, তার তো জানার কথা, একটা মানুষ কতো পরিশ্রম করে ভালো রেজাল্ট করতে পারছে না, সেখানে পড়াশোনা না করেই টাকা দিয়ে আসল সার্টিফিকেট কিনে নিচ্ছে। এটা কাঙ্ক্ষিত নয়।

হারুন বলেন, সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তার দায় সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। প্রয়োজনে তাকে এক দুই দিনের সময় দেব। তিনি যদি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, আর আমরা যদি তার সংশ্লিষ্টতা বা অনৈতিক যোগসাজশের তথ্য-প্রমাণ পাই, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

তিনি বলেন, পরীক্ষার হলে নকল প্রতিরোধে আমরা কাজ করেছি, অপরাধী চক্রকে গ্রেপ্তার করেছি। অথচ দুঃখজনক হলো, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, তার পরিবার, সিস্টেম অ্যানালিস্ট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিলে সিন্ডিকেট বানিয়ে যেভাবে প্রতারণা, সনদ জালিয়াতি করেছেন তা নজিরবিহীন। এটা আসলে কাম্য হতে পারে না, তাই জড়িত প্রত্যেককে আমরা একে এক আইনের আওতায় নিয়ে আসব। কাউকে ছাড় দেব না।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চেয়ারম্যান জানার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা আরেকটু তদন্ত করব। এটা ইচ্ছা কৃত নাকি জেনেও ব্যবস্থা নেননি তা জানার চেষ্টা করব। দায় এড়ানোর তো সুযোগই নেই। তিনি ইতোমধ্যে ওএসডি হয়েছেন।

হারুন বলেন, সার্টিফিকেটগুলো কারা কিনেছেন, কোথায় কোথায় বিক্রি হয়েছে। সেটা দেখা হবে। বুয়েটের একটা পরীক্ষক দল আসবে। বিশ্লেষণ করে দেখা হবে আসলে কী পরিমাণ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল। কী পরিমাণ টাকা লেনদেন করা হয়েছে। তদন্ত আরো চলবে। কারা টাকা দিয়েছে, কারা সনদ নিয়েছে। তারা কখন কাকে কী পরিমাণ টাকা দিয়েছেন, সেসব বিষয় দেখা হবে। আর্থিকভাবে চেয়ারম্যান জড়িত কি না তা খুঁজে বের করা হবে। সব কিছু তদন্ত করা হবে। তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ডিবির নজরদারিতে থাকবেন। যারা অন্যায় করেছেন, রক্ষক হয়ে যদি এখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় হওয়া এ সংক্রান্ত মামলায় এখন পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান, তার ব্যক্তিগত সহকারী ফয়সাল, কুষ্টিয়া গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলি, কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুজুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের পাশাপাশি সার্টিফিকেট জালিয়াতির সঙ্গে আরো রাঘব বোয়াল জড়িত। তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে তাদের। দুদক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ আরও কমপক্ষে ৩০ জন এই সার্টিফিকেট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে ডিবি। তাদের বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করে তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এ বিষয়ে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমানের অভিমত ‘এই দুর্নীতির খনির ভেতরে আমরা ধীরে ধীরে প্রবেশ করছি। আরও কাজ বাকি। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে’।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট জালিয়াতির সঙ্গে বোর্ডের সদস্য সাবেক চেয়ারম্যানসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে শুধু এই ছয়জন জড়িত নয়, বোর্ডের আরো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। জানা যায়, সার্টিফিকেট জালিয়াতির সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আরও তিন কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিবিএ নেতা আব্দুল বাছের, রেজিস্ট্রেশন শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামার মামুনুর রশীদ ও বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া আব্বাস। তারা বিভিন্ন সময় বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানকে শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট পরিবর্তন ও জাল সার্টিফিকেট তৈরি করার কথা বলতেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, এ কে এম শামসুজ্জামান সার্টিফিকেট তৈরি ও রেজাল্ট পরিবর্তন করে দিতেন। তবে এজন্য তারা শামসুজ্জামানকে কোনো টাকা দিতেন না। একই বোর্ডের লোক হওয়ায় শামসুজ্জামান তাদের কাছে টাকা চাইতে সাহসও পেতেন না। এদিকে রিমান্ডে থাকা শামসুজ্জামান ডিবিকে জানান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট কাগজ প্রতি বান্ডেলে ৫০০টি করে থাকে। বান্ডেলে করা এসব কাগজ শামসুজ্জামান শিক্ষা বোর্ডের অফিস থেকে সংগ্রহ করতেন। তবে তার কাছে জাল সার্টিফিকেট তৈরির এত চাহিদা থাকত যে বোর্ড অফিসের কাগজ পর্যাপ্ত হতো না। কাগজের জোগান ঠিক রাখতে রাজধানীর পুরান ঢাকা ও রংপুরের একটি প্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের আসল কাগজের নমুনা দেখানোর পর তারা হুবহু সার্টিফিকেটের কাগজ তৈরি করে দিতেন শামসুজ্জামানকে। শামসুজ্জামান প্রতিদিন অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে এসব কাগজ দিয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করতেন। এসব জাল সার্টিফিকেট প্রিন্ট করার কাজ করতেন তার ব্যক্তিগত সহকারী ফয়সাল। রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছিল সার্টিফিকেট প্রিন্ট করার জন্য। সেখানে এসব জাল সার্টিফিকেট প্রিন্ট করতেন ফয়সাল। তারপর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে এসব জাল সার্টিফিকেট আপলোড করে দিতেন শামসুজ্জামান। আপলোড করার পর এসব জাল সার্টিফিকেট পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে ভেরিফিকেশন করা যেত। জিজ্ঞাসাবাদে শামসুজ্জামান জানান, তিনি ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সার্টিফিকেট তৈরির কাজ শেখেন। মোহাম্মদ শামসুল আলম নামে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টের কাছ থেকে এই জালিয়াতি শেখেন। শামসুল আলম বিভিন্ন সময় ডিপ্লোমা পরীক্ষার সার্টিফিকেট জালিয়াতি করতেন। শিক্ষার্থীদের কাছে জাল সার্টিফিকেটও বিক্রি করতেন তিনি। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী পাস করতে পারত না, তাদের নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে পাস করিয়ে দিতেন শামসুল। তার কাছ থেকে শিখে শামসুজ্জামান এসএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষার্থীদের জাল সার্টিফিকেট বানানোসহ পরীক্ষা প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে দিতেন। ডিবি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রথমে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। পরে দালালরা শামসুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করত। পরে সেই অনুযায়ী শামসুজ্জামান জাল সার্টিফিকেট বানাতেন। জাল সার্টিফিকেটপ্রতি ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালকরাও যোগাযোগ করতেন তার সঙ্গে। পরিচালকরা সার্টিফিকেটপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিলেও তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আরো মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন। প্রায় ৩০ জনের মতো দালাল ও পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে শামসুজ্জামানের।

নরসিংদী, ময়মনসিংহ, খুলনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দালাল ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা যোগাযোগ করতেন তার সঙ্গে। জাল সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বোর্ড সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে আইনে কী ব্যবস্থা রয়েছে, তা সাধারণ মানুষের জানার কথা নয়। তবে কারিগরি বোর্ডের এই কাহিনী থেকে জাতি কী বার্তা পেল, তা নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। অন্যথায় এই বোর্ড সম্পর্কে মানুষের শ্রদ্ধা নষ্ট হবে। মানুষ অন্য বোর্ড সম্পর্কেও সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠবে। তাই সামাজিক সংশয় দূর করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টির রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়ার ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ব।