সুসংবাদ প্রতিদিন

ঠাকুরগাঁওয়ে শতকোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদনের সম্ভাবনা

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভুট্টার চাষ। এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ জেলা থেকে ১০০ কোটি টাকার ভুট্টা উৎপাদনের ও বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার মাঠ-ঘাটগুলো ছেয়ে গেছে ভুট্টার ফসলে। যেসব মাঠে আগে দেখা যেত অন্যান্য ফসলের সমারোহ সেসব মাঠে ব্যাপকভাবে চাষ হয়েছে ভুট্টা। লাভজনক ফসল হওয়ায় দিন দিন ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়ছেন জেলার চাষিরা। এবার ভুট্টা গাছের গ্রোথ ভালো হওয়ায় ও গাছে ফল (মোচা) ভালো আসায় গত বছরের তুলনায় বেশি লাভবান হওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় মোট ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৯৩ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৭ জাহার ৪৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ হয়েছে ৪০ হাজার ২৪০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর ভুট্টা চাষ হয়েছিল প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর এবং ২০২২ অর্থবছরে চাষ হয়েছিল ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে। পোলট্রি খাত, হাস-মুরগি, গবাদি পশু ও মানুষের খাদ্যের তালিকায় ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার এর চাহিদাও ব্যাপক। ফসলি মাঠগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায় দেখা যায় শুধু সবুজ রঙের ভুট্টার গাছ ও সাদা ধুসর ফুলের সমারোহ। গমসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টায় বেশি লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা। তাই জেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভুট্টার চাষ। গত বছর ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা এবছর আরও বেশি করে চাষ করেছেন আগাম উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা। কৃষকরা বলেছেন, গমের থেকে ভুট্টা চাষে লাভবান বেশি হওয়ায় ও আলুর তুলনায় ভুট্টায় খরচ কম এবং লাভ বেশি। তাই তারা ভুট্টা চাষ করেছেন। ৫০ শতাংশের এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। আর পরিচর্যা অনুযায়ী ফলন হয় ৮০ থেকে ১০০ মণেরও অধিক। এক বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি হয় কম পক্ষে ৭০-৮০ হাজার টাকা। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে গম বা ধান করলে হয় মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকার। তাই গম বা বোরো ধানের তুলনায় ভুট্টায় দ্বিগুণ বেশি লাভ পাওয়ায় ভুট্টার চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ও গত বছরের মতো এবারও দাম পেলে ভুট্টা চাষে অধিক লাভবান হওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার গিলাবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল মাকেল বলেন, গতবারের তুলনায় এবার আমাদের এইদিকে অনেক বেশি ভুট্টা চাষ করছে মানুষ। মো. আবু সেলিম নামে এক ভুট্টা চাষি বলেন, ভুট্টায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভালো বেশি হয় তাই দিন দিন কৃষকরা বেশি করে ভুট্টা চাষ করেছে। গম ও আলুর তুলনায় আগাম ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম থাকে এবং গমের তুলনায় ভুট্টায় দ্বিগুণ লাভ হয়। এছাড়াও আলুতে অনেক খরচ হয় সেই তুলনায় ভুট্টা খরচ অনেক কম।

ভুট্টা চাষি আব্দুল মান্নান বলেন, গত বছর আমি ৮০ কেজি ওজনের কাচা এক বস্তা ভুট্টা বিক্রি করেছি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা। এবারও যদি দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলে কৃষকরা ভুট্টাতে অনেক লাভ করতে পারবেন। পীরগঞ্জ উপজেলার চাদপুর টিয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. নাসিম বলেন, আমাদের এদিকে গত বছরের তুলনায় ভুট্টা গাছের গ্রোথ অনেক ভালো। আল্লাহর রহমতে দাম থাকলে এবার ভুট্টা ভালো লাভবান হতে পারি। জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ১ বিঘা জমিতে ভুট্টায় খরচ হয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। আর ফলন পাই ৭০-৮০ মণ। ১ হাজার টাকা করে মণ পেলেও প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তাতে খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। যদি গম বা বোরো ধান করতাম তাহলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যেত। আবার খরচ হতো প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। তাই এদিকের মানুষ বেশি করে ভুট্টা আবাদ করছেন। মো. রবিউল নামে আরেক ভুট্টা চাষি বলেন, আমি গত বছর ভুট্টা করেছিলাম তাতে প্রতি গাছে একটা করে মোচা (ফল) ধরেছিল কিন্তু এবার আমার ভুট্টা খেতে প্রায় ৮০ ভাগ গাছে দুটি করে মোচা (ফল) ধরেছে। আল্লাহর রহমতে এবার ফলন ভালো হলে লাভ হবে বেশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছাম্মাৎ শামীমা নাজনীন জানান, লক্ষ্যমাত্রা থেকেও বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে ও গতবারের তুলনায় এবার ভুট্টার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত কৃষকরা লাভজনক ফসলের দিকে বেশি ঝুঁকেন তাই ভুট্টাও একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকে তারা কৃষকদের ভুট্টা চাষে ও রোগ বালাই দমনে পরামর্শ প্রদান করছেন বলেও জানান তিনি। কৃষকদের মতে গত বছর ৮০ কেজির এক বস্তা ভুট্টা তারা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রয় করেছিল। সেই হিসেবে এবার প্রতি মণ ভুট্টার দাম মাত্র ১ হাজার টাকা ধরা হলে জেলা কৃষি অধিদফতরের উৎপাদন লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ৪ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টার দাম ১০০ কোটি টাকা দঁড়ায়। সেই অনুযায়ী এ জেলা থেকে চলতি মৌসুমে শুধু ভুট্টা থেকে ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভবনা আছে।