চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা। গতকাল জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। আজও চলবে এই খেলা। প্রতি বছর ১২ বৈশাখ বিকালে ঐতিহ্যবাহী এ খেলা শুরু হয়। এ বলীখেলাকে ঘিরে কোতোয়ালি, লালদিঘি, সিনেমা প্যালেস, আন্দরকিল্লার এক বর্গকিলোমিটারজুড়ে বসেছে বৈশাখি মেলা। এ মেলার বিশেষত্ব হচ্ছে- বৃহত্তর চট্টগ্রামে গৃহস্থরা মেলা থেকে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রী কেনেন। সরেজমিন দেখা গেছে, বেশি বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা ও পাহাড়ি ফুলঝাড়ু। দেশে তালপাতা, বাঁশ, বেত, কাপড় দিয়ে যত রকমের বৈচিত্র্যময় নকশার হাতপাখা আছে তা মেলাতে মিলছে। গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে হাতপাখার চাহিদা বেশি এবার। একটা কথা প্রচলিত আছে- সুঁই থেকে ফুল শয্যার খাটও মেলে লালদিঘির এ মেলায়। কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয় মেলায়। খেলার আগের দিন ও পরের দিন মিলিয়ে তিন দিনের বৈশাখি মেলা হলেও এবার বেশ কয়েকদিন আগেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। সকাল ও বিকালে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা বেশি। খেলার আগের দিন ও পরের দিন মিলিয়ে তিন দিনের বৈশাখি মেলা হলেও এবার বেশ কয়েকদিন আগেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। সকাল ও বিকেলে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা বেশি। দিনের বেলা বৈশাখি হাওয়া, দাবদাহ, সংসারের কাজের চাপে ব্যস্ত নারীরা মেলায় আসেন রাতে। নিরিবিলিতে কেনাকাটা করেন তারা। সারা রাত চলে বেচাকেনা। মেলায় আসা ক্রেতাদের সুবিধার্থে ট্রাফিক বিভাগ গাড়ি চলাচলে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। সিনেমা প্যালেস এলাকায় সস্তা কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের বিপুল পসরা। বেতের তৈরি চমৎকার সব আসবাব, দোলনা, শোপিস মিলছে লালদীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে। উত্তর-পশ্চিম কোণে চারার মেলা। পাশেই শিমুল তুলার হাট। মেলার প্রধান আকর্ষণ এখন মাটির তৈরি দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের ব্যাংক, ফুলদানি, হাঁড়ি, কলসি, জগ, গ্লাস, পানি ঠান্ডা রাখার পাত্র, পুতুল, খেলনা, দেবদেবী ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, গহনা, শোপিস ইত্যাদির। বিক্রেতারা জানান, মেলায় লোকসমাগম যেমন বেশি দোকানিও বেশি। তবে ক্রেতার চেয়ে বেড়াতে আসা মানুষ বেশি। অনেকে আসছেন শুধু ছবি তুলতে কিংবা ভিডিও করতে। তারপরও খুশি আমরা। সিনেমা প্যালেস থেকে হাজারী লেন সড়কের দুইপাশে এবং লালদিঘির পেট্রলপাম্প ও জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে মৃৎশিল্প সামগ্রীর মেলা। প্রযুক্তির কল্যাণে দিন দিন ডিজাইন যেমন হচ্ছে হৃদয়কাড়া তেমনি টেকসইও। দামও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। কুটির শিল্পসামগ্রী বিশেষ করে বাঁশ, বেত, সুতলির তৈরি ঝুলন্ত বাতির ফ্রেম, রশির তৈরি দোলনা, খেলনা, কাঠের পুতুল, নৌকা, একতারা, দোতারা, ঢোল, ফুলদানি, গহনার কদর বাড়ছে। এসব দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তরুণ-তরুণীরা। যথারীতি রেশমি চুড়ি, কাচের চুড়ি, পায়েল, কানের দুল, গলার সেটের স্টল আছে পুরো মেলাজুড়ে। খই, গজা, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টান্ন, চনাচুরের মুখরোচক খাবারের শতাধিক স্টল আছে লালদিঘির মোড়েই। মেলায় আসা গৃহিণী উম্মে সালমা জানান, দা, বঁটি, ছুরি, শীতলপাটি থেকে আস্ত খাট পালঙ্ক পর্যন্ত সংসারে যা যা লাগে সবই আছে এ মেলায়। এ মেলার জন্য চাঁটগাইয়ারা সারা বছর অপেক্ষা করে। তবে দর-কষাকষি করে কিনতে হবে। মূল লালদিঘির মাঠের উত্তরপ্রান্তে নাগরদোলা বসেছে একসারি। সেখানেও ভিড় কিশোর-তরুণদের। আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখি মেলা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী বলেন, বলীখেলার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত। বলীরা নাম নিবন্ধন করছেন। আজ রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা চলবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মেলা কমিটি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা কোনো উদ্যোক্তা, বেপারী, দোকানির কাছ থেকে চাঁদা নেয় না। এ বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। কেউ চাঁদা দাবি করলে পুলিশে সোপর্দ করার অনুরোধ জানানো হয়। প্রসঙ্গত, ১৯০৯ সালে বকশিরহাটের স্থানীয় ধনী বণিক বদরপাতি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার সওদাগর বলীখেলা প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। জানা যায়, এই ব্যবসায়ীর শুধু বলীখেলার প্রতি ভালোবাসা ছিল না বরং তার মধ্যে ছিল দেশের প্রতি ভালোবাসা। ওই সময়টায় ভারতে ব্রিটিশ শাসনে অবসানে চট্টগ্রামে দানা বাঁধছিল আন্দোলন। পরে তার নাম অনুসারেই এই আয়োজনের নামকরণ হয়েছে।