চামেলীকাণ্ড চাপা দিতে ১০ লাখ চেয়েছিলেন রিয়াজ

ফোনালাপ ফাঁস

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন নতুন বির্তকে জড়িয়ে পড়ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। দক্ষিণ আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত নারীনেত্রী সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য গোপন করতে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। এ ঘটনায় তাদের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। জানা গেছে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীকে গত ২৪ এপ্রিল দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। এর আগে চামেলীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না বলে ১০ লাখ টাকায় রফাদফা করতে চেয়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নাম ভাঙিয়ে তিনি এ টাকা দাবি করেন। ১০ লাখ টাকা হলে চামেলীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না। শুধু অব্যাহতি দেওয়া হবে। আর সেটি পরবর্তীকালে তুলে নেওয়ারও ব্যবস্থা করবে রিয়াজ। এমন একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড আলোকিত বাংলাদেশের হাতে আছে। ১৮ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়, ‘রিয়াজ বলেন, আমি তো কাজে আসছি। চামেলী বললেন, কথা হয়েছে? তখন রিয়াজ বললেন, ঠিক আছে অসুবিধা নাই। আপনি তো ওই সময় বললেন সন্ধ্যায় আসবেন, এখন আবার! তখন চামেলী বললেন, মানে সন্ধ্যায় বুঝি নাই? আইসা আবার জোগাড় করতে হবে। তখন রিয়াজ বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, কথা আর বাড়ানোর দরকার নাই। ঠিক আছে। তখন চামেলী বললেন, ঠিক আছে আমি সকালে ১০ পাঠাইয়া দিতাছি। তখন রিয়াজ বললেন, ঠিক আছে।’ 

পরবর্র্তীতে সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন চামেলী। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ভাঙিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে ১০ লাখ টাকা আমি যোগাড় করতে পারিনি। টাকা দিতে না পারায় আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রিয়াজ আমাকে যে ফোন করেছিল সেটি আমি অডিও রেকর্ড করে রেখেছি। তার অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমার কি কাউকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা আছে? অথবা কারো অব্যাহতি উঠিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে! এই অডিও রেকর্ডে তো তেমন কিছু বলা হয়নি। আমি কি তার কাছে টাকা চেয়েছি? কোথাও বলতে শুনেছেন আমি টাকা চেয়েছি?

এর আগেও রিয়াজের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও শিক্ষিকাদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের (নারী শিক্ষা মন্দির) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন বিদ্যালয়টির সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের বিরুদ্ধে। তখন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়। পদ ফিরে পেয়ে ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এর আগেও একটি স্কুলের সভাপতি হয়েছিলেন। সেখানে টাকা-পয়সার অনিয়ম করার অভিযোগ ওঠে। এমনকি নারী শিক্ষিকাদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তখনো দল থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর জন্য কিছু করতে পারি না। আপনারা তার কাছে একটু জিজ্ঞেস করেন। রিয়াজের মতো এই ধরনের মানুষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগে থাকার দরকার নেই। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীকে ফোন করা হলে তার পিএস ধরেন। তিনি বলেন, স্যার এখন ব্যস্ত আছেন। স্যার এই মুহূর্তে সাভারে একটি প্রজেক্ট ভিজিটে আসছেন। স্যার এখন কথা বলতে পারবেন না।

এদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২০নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীর একটি অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ভিডিওটি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে সৈয়দা রোকসানা ইসলাম চামেলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।