ঢাকা ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ

শেরে বাংলা ও আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শেরে বাংলা ও আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম এবং প্রবীণ রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ এবং আলোচনা সভা। জাতীয় এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে আজ সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও তাঁর পবিত্র আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশাল বিভাগ সমিতি এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। আজ বিকাল ৪টায় মতিঝিল কিচেন ইয়ার্ড পার্টি সেন্টারের ভিআইপি রুমে এই আলোচনা অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু।

শেরে বাংলা ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শিক্ষানুরাগী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবেও ইতিহাসের পাতায় তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের মিঞা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আইনসভার সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও তার অবদান ছিল। ১৯৪০ সালে তিনি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি ২১ দফা দাবিরও প্রণেতা ছিলেন।

এদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্টমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আব্দুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আজ সকাল ৯টায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মরহুমের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এতে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বাদ আছর কলাবাগানস্থ লেকভিউ জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

আব্দুস সামাদ আজাদ ১৯২২ সালের ১৫ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় ভুরাখালী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রথমে গ্রামের বিদ্যালয়ে ও পরে দিরাই উপজেলার জগদল ভাটিরগাঁও বিদ্যালয়ে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ইতিহাস শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ইতিহাস বিষয়ে তিনি এম এ পাশ করেন। তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাখার কারণে সরকার তার এম এ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করতে গিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়ায় পাক সাময়িক সরকার পুনরায় তাকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারীর পর তিনি আবার গ্রেপ্তার হন এবং ৪ বছর কারাভোগ করে ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সৃষ্ট ষড়যন্ত্রমূলক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে তিনি কারারূদ্ধ হন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি সুনামগঞ্জ জেলার ২ ও ৩নং আসন জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-৩ আসন এবং দিরাই-শালা-ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ-২, দু’টি আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এর আগে ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি মুজিবনগর সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা (পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা) এবং ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সামাদ আজাদ বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

১৯৭১ সালের হাঙ্গেরির বুদাপেষ্টে বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং বিশ্ব বর্ণবৈষম্য কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ৯০’র স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত