সুসংবাদ প্রতিদিন

এক মৌসুমেই ৫০ কোটি টাকার উলু ফুল বাণিজ্য

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

তিন পার্বত্য জেলায় উলু ফুল প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। এখন পাহাড়জুড়ে উলু ফুল সংগ্রহ করার মৌসুম চলছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পাহাড়িরা নিজেদের বাগান ছাড়াও দুর্গম এলাকায় গিয়ে পাহাড়ে পাহাড়ে খোঁজ করে উলু ফুল সংগ্রহ করেন। ১৮ থেকে ২০টি করে বেঁধে এক আঁটি উলু ফুল স্থানীয় বাজারে নিয়ে গিয়ে ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা। আবার অনেক ব্যবসায়ী গ্রামে গ্রামে ঘুরে আঁটি সংগ্রহ করেন। শহরের কলেজ পাড়া ও খবংপড়িয়া সড়কের উলু ফুল শুকানোর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বোরো মৌসুমের ধান চাষ করা হয় না, এমন ফসলি জমিতে একসঙ্গে চারটি খোলায় কয়েকশ’ শ্রমিক উলু ফুল রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত। কেউ শুকনা ফুল বেঁধে রাখছেন। এছাড়া এ পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পাঠাতে ট্রাকে ভর্তি করছেন। এ উলু ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে অসংখ্য পরিবার। খাগড়াছড়ি বন বিভাগের মতে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এখন পর্যন্ত ১২৩০০০ ব্রুম (উলু ফুলের পরিমাণ) উলু ফুল উৎপাদিত হয়েছে। এ পণ্য থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে চার লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে উলু ফুল প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। ভালো লাভ হয় বলে গত দুই-তিন বছর ধরে স্থানীয়রা এ পণ্য বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে। কোনো পানি দিতে হয় না, বিনা পরিচর্যায় সহজেই চাষ করা যায়। শুধু লাগিয়ে দিলেই হয়ে যাচ্ছে। খাগড়াছড়ির স্থানীয় উলু ফুল ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বাজারে দাম একটু কম। ইদানীং দেখা যাচ্ছে যে ভারত, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে কিছু মাল দেশে আসছে। বিশেষ করে ভারতের কিছু চোরাই পথে মাল আসে। এ কারণে আমাদের বাজার মূল্য একটু কম। এ বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ওই এলাকারই উলু ফুল ব্যবসায়ী মো. মানিক বলেন, এই বছর মালের দাম বেশি, কিন্তু ফুল কম। সদর ছাড়া মহালছড়ি-দীঘিনালাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে এ পণ্য সংগ্রহ করি। আমার মাঠে পনের থেকে ২০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে। এই মাঠ থেকে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক মাল যায়। এখানে কোটি টাকার বেশি ইনভেস্ট করতে হয়। ঢাকা থেকে আসা উলু ফুল ব্যবসায়ী মো. রেজাউল, মো. শহীদ বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা ছাড়া রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলা থেকে শুকনা উলু ফুল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের থেকে কিনে নিয়ে যান তারা। এক মৌসুমে ১৪-১৫ ট্রাক পণ্য ঢাকা, রাজশাহী, সিলেটসহ সারাদেশে বিক্রি করা হয়। খাগড়াছড়ি উলু ফুল সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা ছাড়া রাঙমাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু উপজেলাসহ মিলে এক মৌসুমে প্রায় ৮০০ ট্রাক মাল যায় সারাদেশে। এতে খাগড়াছড়িতে এক মৌসুমে ৫০ কোটি টাকার উলু ফুলের বাণিজ্য হয়। খাগড়াছড়িতে স্থানীয় ৫০ জন ব্যবসায়ী আছে। তাদের অধীনে প্রায় ২০ হাজার জন শ্রমিক কাজ করে তাদের সংসার চালাচ্ছে। খাগড়াছড়ি বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ফুলের ঝাড়ু (উলু ফুল) এক সময় অবহেলিত ছিল। কিন্তু বর্তমান চাহিদার কারণে এটা খুবই মূল্যবান পণ্য। এখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী কম পরিশ্রমে, কম বিনিয়োগে এটা থেকে লাভবান হচ্ছে। এ খাত থেকে প্রচুর রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যদি এ পণ্য দেশের বাইরে রফতানি করতে পারি, তাহলে আমরা আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। এর ফলে স্থানীয় জনগণ আরো বেশি লাভবান হবে।