তৃতীয় দিনেও জমজমাট চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত জব্বারের বলীখেলার বৈশাখি মেলা। মেলা গতকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলে তা শেষ হচ্ছে আজ। ক্রেতাসাধারণের বিপুল উপস্থিতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেলার আয়োজক কমিটি। মেলা ঘুরে দেখা যায়, আগ্রহী ক্রেতারা ভীড় করছেন বিভিন্ন পণ্যের দোকানে। মানুষের বিপুল উপস্থিতি তিল ধরনের জায়গা নেই মেলা প্রাঙ্গণে। এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ বলী খেলায় এবারের নতুন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার হোমনা থানা এলাকার বাঘা শরীফ বলী। গত বৃহস্পতিবার বিকালে অনুষ্ঠিত বলী খেলার ১১৫তম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয় কুমিল্লার বাঘা শরীফ ও রাশেদ। এর আগে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়ে রাঙামাটির সৃজন চাকমাকে হারিয়ে ফাইনালে যান রাশেদ। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রাসেলের এর প্রতিপক্ষ ছিলেন বাঘা শরীফ। এদিকে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জয় পান সৃজন চাকমা। এনিয়ে টানা তৃতীয়বার তৃতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি। এবার জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখি মেলাকে ঘিরে লালদীঘি ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা-ব্যবস্থা জোরদার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সূত্র জানায়, এবারের আসরে খেলার কথা ছিল গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহ জালাল বলীর। সেজন্য তিনি নামও জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে শিষ্যকে সুযোগ দিতে নিজেই সরে দাঁড়ালেন আসর থেকে। এদিকে জীবন বলী শারীরিক অসুস্থতায় নিজের নাম প্রত্যাহার করেন। পরে বাঘা শরীফের নাম প্রস্তাব করলেও তাকে নিতে রাজি হয়নি বলী খেলা কমিটি। কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকে আবারও সুযোগ দিতে গুরু শাহ জালালও সরে দাঁড়ান। তাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কুস্তির রিংয়ে দাঁড়িয়ে গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শরীফ। তিনি বলেন, আমি প্রথমবার খেলতে এসেছি। গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহ জালাল ভাই আমার গুরু। তিনি না খেলে আমাকে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। উনি অনেক বড় মনের মানুষ। আপনারা উনার জন্য দোয়া করবেন। গত আসরের রানারআপ জীবন বলী জানান, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আমার পরিবর্তে বাঘা শরীফকে খেলানোর নাম প্রস্তাব করেছি। এর আগে বিকাল ৪টায় শুরু হয় বলী খেলার ১১৫ তম আসর। এতে ৮৪ জন বলী অংশ নেন। আসর শুরু আগেই দর্শকদের আগমনে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় লালদীঘির ময়দান। প্রসঙ্গত, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের সনামধন্য ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সাওদাগরের এ বলী খেলার সূচনা করেন। সেই থেকে প্রতি বছরের বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্যতিক্রমধর্মী এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল আয়োজিত জব্বারের বলী খেলার ১১৪তম আসরে কুমিল্লার শাহজালাল বলীর কাছে হেরে ছিলেন চকরিয়া উপজেলার তরিকুল ইসলাম জীবন।
