চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বলী খেলার মেলায় কয়েকদিনে লেনদেন হয়েছে শত কোটি টাকার। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে মেলার আয়োজক কমিটি। বিক্রি ভালো হওয়ায় বিক্রেতার মুখে ছিল স্বস্তির হাসি। প্রথম দুই দিন বিক্রেতারা পণ্যের দাম ধরে রাখলেও শেষ দিন এসে গতকাল দাম ছেড়ে পণ্য বিক্রি করতে থাকেন। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রথম দিকের তুলনায় পণ্যসামগ্রীর দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। যে ফুলঝাড়ুর জোড়া আড়াইশ’ টাকা ছিল তা গতকাল দেড়শ’ টাকায় নেমে যায়। মাত্র ১০০ টাকায় পাওয়া যায় ফুলের ঝাড়ু। ঢাকা থেকে মৃৎশিল্প সামগ্রী নিয়ে আসা সরওয়ার জানান, আমার পণ্যগুলো ভঙ্গুর। পরিবহন করে নিয়ে আসার সময় অনেক জিনিস ভেঙে গেছে। তাই কেনা দাম পেলেও বিক্রি করে দিচ্ছি। নয়তো উল্টো গাড়িভাড়া গুণতে হবে। গরমে হাঁসফাঁস করলেও বৃষ্টিপাত না হওয়ার খুশি বিক্রেতারা। একই সঙ্গে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। কয়েকজন বিক্রেতা জানান, মেলার সময় কয়েকদিন বাড়ানো গেলে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা উপকৃত হতো। এদিকে, সারা বছরের গৃহস্থালীসামগ্রী সংগ্রহের লক্ষ্যে নগরের কিছু মানুষ অপেক্ষায় থাকে বৈশাখ মাসের জন্য। কারণ এ মাসেই আয়োজন করা হয় চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা। বলীখেলা ঘিরে বসে বৈশাখি মেলা। লালদীঘি ময়দানের আশপাশে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বৈশাখি মেলার আয়োজন হয়। এটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে বড় বৈশাখি মেলা। এবার ২৫ এপ্রিল বসেছিল বলী খেলার ১১৫তম আসর। মেলায় এসেছিলেন বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা। তিন দিনের বৈশাখি মেলায় জমেছিল মানুষের ভিড়। গতকাল শনিবার ভোরে এ মেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হওয়ার কথা থাকলেও স্বল্প পরিসরে বিকিকিনি চলবে আরও দিন-দুয়েক। মূলত যারা বিভিন্ন হাতে তৈরি পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন তারা প্রধান রাস্তা থেকে সরে ফুটপাতে চলে যান। অনেকে ফেরি করেও বিক্রি করেন পণ্য। নগরের আন্দরকিল্লা মোড় থেকে লালদীঘি হয়ে সিনেমা প্যালেস মোড় এলাকা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিন দিন মেলায় উপচেপড়া ভিড় ছিল। মেলা শেষ হওয়ার পরেও যেন এর রেশ থেকে যায়। একইভাবে হাতপাখা, মাটির তৈজসপত্র, ফুলদানি, শোপিস, দেবদেবীর প্রতিকৃতি, খেলনা, গহনা, শীতলপাটি, মুড়ি-মুড়কি, মিষ্টান্ন সব কিছুই কম লাভে বিক্রি করে দিচ্ছেন বেপারি, দোকানি ও উদ্যোক্তারা। এ মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় হাতপাখা ও পাহাড়ি ফুলঝাড়ু। গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে হাতপাখার চাহিদা এবার আরও বেশি। মেলায় আরও পাওয়া যায় দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের মাটির ব্যাংক, ফুলদানি, হাঁড়ি, কলসি, জগ, গ্লাস, পানি ঠাণ্ডা রাখার পাত্র, পুতুল, খেলনা, দেবদেবী ও গহনা, শোপিস ইত্যাদি। সিনেমা প্যালেস মোড়ে কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের বিপুল পসরা। বেতের তৈরি চমৎকার সব আসবাব, দোলনা, শোপিস পাওয়া যাচ্ছে এখনও। মেয়েদের রেশমি চুড়ি, কাচের চুড়ি, পায়েল, কানের দুল নিয়ে বেশ কয়েকজনকে দেখা গেল বিক্রি করতে। সেইসঙ্গে স্টল গুটিয়ে গেলেও বঁটি, ছুরি, শীতলপাটি থেকে শুরু করে নানা গৃহস্থালির পণ্য সমাহারেরও দেখা মিলবে। দর কষাকষি চললেও মেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় আগে কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে এসব পণ্য। প্রসঙ্গত, বলীখেলা মানে কুস্তি প্রতিযোগিতা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তিকে বলীখেলা নামে ডাকা হয়। ১৯০৯ সালে প্রথম এই প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করেন চট্টগ্রামের জমিদার আব্দুল জব্বার সওদাগর। জব্বারের বলীখেলা ও মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে চট্টগ্রামবাসী। যেখানে জড়িয়ে আছে তাদের শত বছরের আবেগ আর ইতিহাস। এ বলীখেলা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য যেন অন্যরকম উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে।