পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছেন, ফরেনসিকের বিষয়ে বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য আমাদের দেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সাউথ এশিয়ার মধ্যে শুধু ভারতে আছে। আমরা চেষ্টা করছি ফরেনসিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার জন্য। ফরেনসিকের ওপর আপাতত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করা এখন সময়ের দাবি। ঢাবির বর্তমান উপাচার্যের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশা করছি সহসা এ বগতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘স্টুডেন্টস এনগেজমেন্ট টু কমব্যাট সাইবারক্রাইম’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯১ জন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ৫৩ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০ জন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন, কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ জন ও গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জনসহ মোট ২৪৭ জন ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপস বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (পদোন্নতিতে অ্যাডিশনাল ডিআইজি) তৌহিদুল ইসলাম, ডিজিটাল ফরেনসিক বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিজিটাল ফরেনসিক বিভাগের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শামসুল হক, প্রশ্নোত্তর পর্বে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন আইএনটিআই ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার সহযোগী অধ্যাপক ড. খান সরফরাজ আলী। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন ও ফরেনসিক) তানভীর হায়দার চৌধুরী সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্য দেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আজকের ছাত্রছাত্রীরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, তারাই হবে জাতির কর্ণধার ও দেশগড়ার কারিগর। সাইবার বুলিং, সাইবার হ্যারাজমেন্ট, আনইথিক্যাল কন্টেন্ট, হ্যাকিং, ফিশিং, ম্যালওয়্যার, র্যানসমওয়্যার ইত্যাদি সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে আজকের ছাত্রছাত্রীরাই আগামীতে ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে কাজ করবে।
তিনি আরও বলেন, তরুণ প্রজন্ম তথা শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে সাইবার অপরাধ নিবারণে সক্রিয় হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সিআইডির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে।
সেমিনারের প্রশ্নোত্তর ও উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে তরুণ শিক্ষার্থীরা প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা সাইবার অপরাধ সম্পর্কে নিজেদের সমৃদ্ধ করেন ও তাদের মতামত প্রকাশ করেন। সেমিনার শেষে প্রধান অতিথি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সনদ প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীরা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবগুলো পরিদর্শন করেন।
সেমিনারে সোশ্যাল মিডিয়াসহ ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে নানা ধরনের জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ, সাইবার অপরাধ, সাইবার চাঁদাবাজি, মাদক পাচার, অর্থ পাচার, নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ ও হ্যাকিং নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সিআইডির পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, তথ্য শেয়ারিং ও নিজ নিজ জায়গা থেকে চেঞ্জ মেকার হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
মেধাস্বত্ব পাচার, পাইরেটস বই পাচার হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিকার কী বা সিআইডি কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে- সেমিনারে ঢাবির এক শিক্ষার্থী জানতে চাইলে প্রশ্নোত্তর পর্বে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের আছে। মানিলন্ডারিং আইনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত কপিরাইট সংক্রান্ত ধারা আছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে বা অভিযোগ করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সাধারণত এ সংক্রান্ত মামলা থানায় হয় না। এ সংক্রান্ত মামলা আদালতে হয়।