দিনাজপুরে বিরল উপজেলার ১নং আজিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে মোহাম্মদ আলীর (৭০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো তিনজন গুলিবিদ্ধ ও চার পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে।
গত রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সিঙ্গুল হামিদণ্ডহামিদা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরাজিত এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে সংর্ঘষ হয়। এ সময় শটগানের গুলিতে হাজি মোহাম্মদ আলী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। নিহত হাজি মোহাম্মদ আলী বিরল উপজেলার আজিমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সিঙ্গুল ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মাহামুদ বক্সের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের সামনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা জমায়েত হতে শুরু করেন। এ সময় পুলিশ তাদের কয়েকবার ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধ ও চার পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতদের মধ্যে মোহাম্মদ আলীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। অন্যান্য আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত ব্যক্তিকে দেখতে এসে পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সিঙ্গুল হামিদণ্ডহামিদা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা করা হয় এবং সেটি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মেনেও নেন। এরপর সদস্য পদে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ১নং ওয়ার্ডের টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে জোবাইদুর রহমান ২০ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। পরাজিত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম (মোরগ মার্কা) সমর্থকরা ফলাফল মেনে না নিয়ে কেন্দ্রে হামলা চালান। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এরপর জনগণের জান-মাল রক্ষার্থে ৬০ থেকে ৭০ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরিস্থিতি শান্ত হলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। পরে জানা যায়, হাজি মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হই যে মোহাম্মদ আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি টিউবওয়েল প্রতীকের জোবাইদুর রহমানের আপন চাচা হন। তিনি আরো জানান, ঘটনার পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবিসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেগণ অবস্থান করেন। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাভাবিক রয়েছে।
এ সময় উপস্থিত জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পুলিশ এবং আনসার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনা তদন্ত শেষে রিপোর্ট প্রদান করবেন। তবে এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা কিছু বলতে রাজি হননি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত হাজি মোহাম্মদ আলী বিজয়ী ইউপি সদস্য জোবাইদুর রহমানের চাচা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।