সাতক্ষীরায় টানা তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরা
আমবাগান থেকে ঝরে পড়ছে চাষির স্বপ্ন
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড খরা ও পোকার উপদ্রবে ঝরছে সাতক্ষীরার আম চাষিদের স্বপ্ন। কীটনাশক ও পানি দিয়ে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ফল। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বৃষ্টির অভাবে এমন অবস্থায় ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে দিন দিন দাবদাহ যতই বাড়ছে, আম চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ ততই স্থায়ী হচ্ছে। আর জেলা কৃষি বিভাগ বলেছে, টানা তীব্র গরমে আম টিকিয়ে রাখতে বাগান মালিকদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। তবে কী পরিমাণ আমের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি জেলা কৃষি বিভাগ।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভৌগোলিক কারণে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। তাপমাত্রা বাড়ে যাওয়ায় টানা তীব্র গরমের ফলে এবার কালবৈশাখির কবলে পড়তে পারে আমবাগান। গত এক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরায় গড় তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রির ঘরে ওঠানামা করছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টি। ফলে তীব্র খরায় আমবাগানগুলোয় দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা। এরই মধ্যে বিভিন্ন বাগানে ঝরে পড়ছে আম।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আম চাষি মোহাম্মদ নিদারুন গাজী, আব্দুল গফুর বলেন, চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড খরা ও পোকার উপদ্রবে ঝরছে আম চাষিদের স্বপ্ন। কীটনাশক ও পানি দিয়ে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ফলাফল। এমন অবস্থায় ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দাবদাহ যতই বাড়ছে, আম চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ ততই স্থায়ী হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আম চাষি মোহাম্মদ আব্দুল আলীম বলেন, তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর আমের ফলন বিগত কয়েক বছরের তুলনা অনেক কম। এরপর বৃষ্টি না থাকায় আমের কিছু রোগ দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে আম গাছের এক ধরনের সাদা পোকা। এই পোকাগুলো থাকলে আমের ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, তবে তাপপ্রবাহের কারণে কয়েক দিন থেকে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছি। কিছু কিছু আমের গুটি গাছেই শুকিয়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ শুকিয়ে ঝরে পড়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের অফিসার ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরায় গড় তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রির ঘরে ওঠানামা করছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টি। তিনি আরো বলেন, তবে এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সাতক্ষীরায় হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, টানা তীব্র গরমে ঝরে পড়ে যাচ্ছে, আম টিকিয়ে রাখতে বাগান মালিকদের গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আম চাষিদের সঙ্গে কাজ করছেন।
তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। চলতি বছর ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সাতক্ষীরার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শিমুল মন্ডল বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আমের বোঁটার আঠা শুকিয়ে ঝরছে আমের গুটি। গুটি ঝরা রোধে সেচের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড খরায় আমবাগানে সকাল ও সন্ধ্যায় পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে একমাত্র বৃষ্টি ছাড়া আমের গুটি ঝরা বন্ধের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।