ঢাকা ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাবনায় তীব্র তাপপ্রবাহ

মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিপর্যয় আর্থিক ক্ষতির মুখে চাষিরা

মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিপর্যয় আর্থিক ক্ষতির মুখে চাষিরা

পাবনায় তীব্র তাপদাহের কারণে মৌসুমি ফল উৎপাদনে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় লিচু ও আমের বাগানে ফলের গুটি ঝড়ে পড়ছে। বিকল্প ব্যবস্থায় গাছে পানি দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না। এতে চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় বাগান মালিকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বৈরী আবহাওয়ায় ফলন বিপর্যয় প্রতিরোধে গাছের যত্ন ও ফল চাষিদের পরামর্শ প্রদানের জন্য জেলায় ১০টি টিম গঠন করে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

পাবনা কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানান, এবার পাবনা জেলায় ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচু এবং ২ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তালিকাভুক্ত ফল চাষি রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার।

পাবনা অঞ্চলের কৃষকেরা কৃষি ফসলের পাশাপাশি ব্যাপক হারে ফলের চাষাবাদ করে থাকেন। বিশেষ করে পাবনা সদর, চাটমোহর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় আগাম জাতের লিচুসহ নানা প্রজাতির দেশি ও হাইব্রিড জাতের আম ফলের চাষাবাদ হয়। এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির কারণে আম, লিচু ও কাঁঠালের ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। যা জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। তবে চলতি মৌসুমে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে লিচুর ও আমের গুটি ঝড়ে পরছে। বিশেষ করে আমগাছে কালো কালির মতো এক প্রকারের ছত্রাক দেখা দিয়েছে। এই বছরে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাগান মালিক ও ফল চাষিরা। তীব্র তাপপ্রবাহে গাছের গুটি আম ও লিচু শুকিয়ে বা পচে মাটিতে পরে যাচ্ছে। গাছে ফল টিকিয়ে রাখতে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে গাছের গোরায় ও দুই দিন করে গাছের উপরের অংশে পানি স্প্রে করেও রক্ষা হচ্ছে না। পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক লিটন হোসেন জানান, একটি বাগান পাঁচ থেকে ছয় ধাপে বিক্রি হয়। প্রকৃত মালিক যারা তাদের কাছ থেকে আমরা বাগান কিনে ফলের ব্যবসা করি। যত দিন যাচ্ছে গাছ থেকে মুকুল শুকিয়ে ঝড়ে পরছে। গাছের পরিচর্যায় সার, বিষ, কীটনাশক, ওষুধ সব কিছু দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। প্রতিটি বাগানে মেশিন দিয়ে গাছে পানি দেয়া হচ্ছে তবু কাজ হচ্ছে না।

আওতাপাড়া গ্রামের ফলচাষি শামসুল আলম জানান, আম গাছে কাল কালি পরে ফল পচে নষ্ট হয়ে ঝড়ে পড়ছে। গাছে কালা ছত্রাক আক্রমণ করছে। কোনো কিছু দিয়েই কাজ হচ্ছে না। কোন কৃষি অফিসার আমাদের ফল রক্ষায় পরামর্শ প্রদানে এগিয়ে আসেনি। কোন মেডিসিন দিয়ে ফল রক্ষা করা যাচ্ছে না। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ফল চাষিরা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা দরকার।

এ ব্যাপারে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পাবনা জেলার নাম রয়েছে। এই অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। তালিকাভুক্ত ফল চাষি রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার। এই বছরে ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের লিচু ও ২ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। চলতি বছরে ৩৭ হাজার ৭৬৮ মেট্রিকটন লিচু এবং ৪৩ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন আমের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। এ বছরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলনে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে সেটি কাটিয়ে উঠতে কৃষক ও কৃষি বিভাগ কাজ করছে। প্রায় ৯০ শতাংশ গাছে মুকুল ও ফল বেশি এসেছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। বৈরী আবহাওয়ায় যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সেটি রক্ষায় আমরা কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করে আসছি। দিনের বেলাতে সেচ বা স্প্রে না করে ভোর, বিকাল বেলা অথবা রাতের বেলাতে পানি স্প্রের করার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কৃষক ভুল করে দিনের বেলাতে প্রখর রোদের মধ্যে গাছে পানি ছিঁটাচ্ছে। এই কারণে গাছ ও ফলের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি অফিসারদের নিয়ে ১০টি মনিটরিং দল গঠন করার হয়েছে। তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। আশা করছি, সকল বিপর্যয় মোকাবিলা করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও আম ও লিচুর ভালো ফলন পাওয়া সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত