ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুমারখালীর বিশ্বাস ফাউন্ডেশন

শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

অধিক মুনাফার ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুমারখালী থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় বন্দরের কর্তব্যরত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। আটক আনিসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি গা ঢাকা দেন। বিগত পাঁচ মাস পালিয়ে থাকার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে কুমারখালী থানা পুলিশ নিশ্চিত করেছেন।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগরে অবস্থিত বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের আওতায় বিশ্বাস সঞ্চয় ঋণদান ও সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একসময় কর্মরত অফিস সহায়ক মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাসের ছেলে আনিসুর রহমান বিশ্বাস (আনিস) ২০০৬ সালে বিশ্বাস সঞ্চয় ঋণদান ও সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করেন। এরপর বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা দেওয়ার আশ্বাসে সমিতির সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। এনজিও’র সদস্যরা লাখে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা মাসিক লভ্যাংশের আশায় লাখ লাখ টাকা লগ্নি করতে থাকেন বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে। এভাবেই দেশের ৯টি জেলায় বিভিন্ন নামে ৫৮টি এনজিওর শাখা তৈরি করা হয়। ৫৮টি শাখায় প্রায় ১৫৩ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয় এবং কর্মচারীদের নিকট থেকে একাধিক ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প নেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কথা বলে। এসব কর্মীদের দিয়ে তাদের আত্মীয়স্বজনদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে লগ্নি করানো হয়।

২০২৩ সালের শুরুতেই ধস নামে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে। সদস্যরা প্রতারণার বিষয়টি অনুমান করতে পেরে তাদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত চাইলে শুরু হয় নানা টালবাহানা। একাধিকবার সময় দিয়েও টাকা ফেরত না দিলে সদস্যদের চাপে আলাউদ্দিন নগরের বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের মূল অফিসে তালা ঝুলিয়ে তারা লাপাত্তা হয়ে যান। এরপর থেকেই দেশত্যাগের চেষ্টা করতে থাকেন আনিস। ওই সময় স্থানীয়রা পাসপোর্ট কেড়ে নিলে পরবর্তীতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। এছাড়া আগের পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে বলে সাধারণ ডায়রি করে নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আনিস বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের গ্রাহক লিয়াকত আলী বিশ্বাস বলেন, আমার এবং আমার পরিবারের প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়েছে এই আনিস। আমি দ্রুত এর বিচার চাই। বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের গ্রাহক সরোয়ার আলম বলেন, নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমার এবং আমার পরিবার থেকে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করায় আনিস ও তার ভাই আবু সাইদ। আমরা সবাই আমাদের কষ্টের জমানো টাকা ফেরত চাই।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। অভিযুক্ত আনিসের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত