সুসংবাদ প্রতিদিন
দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিদেশি ফল মালবেরি
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক। এই কৃষি খামারটি অবশ্য বিচিত্র ও দুর্লভ উদ্ভিদের সমারহের কারণে অনেক আগে থেকেই দেশে বৃক্ষপ্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিত। এবছর এই কৃষি খামারটির উদ্যোক্তা সোহেল রানা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন উচ্চ মূল্যের পুষ্টি গুণসম্পন্ন ফল মালবেরি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বরেন্দ্র এগ্রোপার্কের গাছে গাছে এখন টক-মিষ্টি স্বাদের থোকায় থোকায় মালবেরি ফল ঝুলছে। পাতার চেয়ে ফলই বেশি ধরে আছে। ফলের ভারে যেন নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। সবুজ, লাল, সাদা, গোলাপি ও কালো রঙের এই ছোট ছোট মালবেরি ফলের আকৃতি আঙুর বা জামের মতো কিছুটা লম্বাটে। গাছেই পাকা পাকা এসব ফল খাচ্ছে পাখিরা। প্রতিদিন স্থানীয়রাও তার এই মালবেরি ফল দেখতে এসে নিচ্ছেন চাষের পরামর্শ।
২০২০ সালে থাইল্যান্ড, ভারত, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মালবেরির ৮টি জাত সংগ্রহ করেন তিনি। তারপর প্রথমবারের মতো ২০২২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন মালবেরির। প্রথম বছরই তার প্রতিটি গাছে প্রচুর ফল ধরে। এবছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন এই মালবেরি ফলের। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় ২০০টি মালবেরির গাছ রয়েছে। স্থানীয় যুবক আকবর হোসেন ও ইসমাইল হোসেন বলেন, এই বাগানটি ঘুরতে এসেছি। এসে গাছে থোকায় থোকায় মালবেরি ফল দেখতে পেলাম। কোনটা সাদা কোনোটা লাল আবার কোনটা কালো হয়ে পেকে আছে। ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন সুস্বাদু। মালবেরি খেতে কোনটি টক আবার কোনোটা মিষ্টি। দেখে খুবই ভালো লাগল। আমরাও চিন্তা-ভাবনা করছি আগামীতে এ ফল চাষ করব। বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, বেরি জাতীয় যে সকল ফল রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত মানুষ স্ট্রবেরির সঙ্গে। কারণ স্ট্রবেরিটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। বেরি জাতীয় যে সকল ফল রয়েছে এগুলো আমদানিরনির্ভর। এছাড়াও বিদেশে এই ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। যে সকল মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন এবং এই ফলটা সম্পর্কে জানেন তারাই আগ্রহ দেখাচ্ছেন বেশি ক্রয় করতে। অনেকে বাগান থেকে আবার অনেকে আমাদের বললে পার্সেল করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। বর্তমানে ৫০০ টাকা কেজি দরে এই ফল বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মানুষ এখন স্বাস্থ্যসচেতন হচ্ছে। বেরি জাতীয় ফলগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়া ছোট ছেলে-মেয়েরা খুবই বেশি পছন্দ করে টক-মিষ্টি হওয়ায় এই ফলটি। মালবেরি ফল দেখতেও যেমন আকর্ষণীয় এবং বাচ্চাদের মেধাবী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এই চিন্তা করেই বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি চাষ করা হয়েছে। এ বছরও প্রচুর ফলন এসেছে। প্রায় দেড় লাখ টাকার মালবেরি এবছর বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি।
সোহেল রানা বলেন, মালবেরি চাষে রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশক তেমন লাগে না। উৎপাদন খরচও কম। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। তাই আগামীতে আরো বড় পরিসরে এই ফল চাষের চিন্তাভাবনা রয়েছে। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মালবেরি প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সমৃদ্ধ ও সুমিষ্ট ফল। এ ফলের বাজারমূল্য ভালো পাওয়া গেলে আগামী দিনে নওগাঁয় মালবেরি ফল একটি সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে আবির্ভূত হবে। নতুন কোনো উদ্যোক্তা মালবেরি চাষে আগ্রহী হলে তাদের মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।