অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে সাতজন আটক

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা পাচার, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে সাতজন আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গোপনসংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩-এর একটি দল গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। এ সময় আনোয়ার হোসেন নামে অপহৃত একজন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়।

আটকৃতরা হলো, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা হাজী ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন (৬৫), মো. আরিফ হোসেন (৫৫), সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), মো. রুহুল আমিন (৬০), মো. জাকির হোসেন (৩০) ও মো. স্বাধীন (৫২)।

ঢাকার কলাবাগান, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, চাঁদপুর ও মাদারীপুর জেলায় তাদের গ্রামের বাড়ি বলে জানা গেছে।

ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া গ্রামের অপহৃত ভিকটিম আনোয়ার হোসেনকে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার এবং স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) মো. শামীম হোসেনসহ র‌্যাবের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত পহেলা মে রাত সোয়া ৮টার দিকে ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে গ্রেপ্তারকৃত খোকন হাজীর নেতৃত্বে ৮ থেকে ৯ জনের একটি দল ভিকটিম আনোয়ারকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজীর মালিকানাধীন ‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ অফিসের ভেতরে আটকে রাখে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা ভিকটিমের উপর লোহার রড, পাইপ ও লাঠি দিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং মোবাইলে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ৯৫ লাখ টাকা দাবি করে। ভিকটিমের ছোটভাই তার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে অপহরণকারীদের একটি ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করে। ওই টাকা প্রদানের পরও অপহরণকারীরা ভিকটিমের উপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে এবং তার পরিবারকে বাকি টাকা দেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করতে থাকে। বাকি টাকা প্রদান না করলে তাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় ওই অপহরণকারী চক্র ও ভিকটিমের অবস্থান শনাক্ত করে। রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অফিসের ভেতরে অভিযান চালিয়ে এই ৭ জনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। অপহরণে ব্যবহৃত রিভলবার, ৮ রাউন্ড রিভলবারের গুলি ও শটগান জব্দ করে র‌্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকৃতরা র‌্যাবের কাছে স্বীকার করে যে, গ্রেপ্তার হওয়া খোকন হাজী ২০১৫ সাল থেকে দেশের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিল। তার এ দুষ্কর্মে সহযোগী ছিল ভারতীয় নাগরিক জনৈক মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানীর এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিত। কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রার মূল ক্রেতা ছিল মিলন চক্রবর্তী। খোকন হাজী ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার ৭টি চালান ভারতে পাচার করেছিল। খোকন হাজীর কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতবমুদ্রা সংগ্রহের কাজে জনৈক নাঈম (৩৫), মোস্তফা হাওলাদার (৫০) ও রবি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশব্যাপী কাজ করত। বিনিময়ে এদের মাসিক ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দিত।

র‌্যাব জানায়, ২০১৭ সালে ভারতীয় নাগরিক মিলন চক্রবর্তী খোকন হাজীকে বিশেষ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও পিতলের ধাতব মুদ্রা ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। যার বিনিময় মূল্য ৪০০ কোটি টাকা। খোকন হাজীর বিশ্বস্ত মোস্তফা হাওলাদার দুষ্প্রাপ্য মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা প্রদানের কথা বলে ঝালকাঠিতে নকল মূর্তি ও একটি প্লাস্টিকের বাক্সে নকল ধাতব মুদ্রা প্রদান করে খোকন হাজীর কাছ থেকে ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনার পর খোকন হাজী মোস্তফা হাওলাদারকে বিভিন্ন এলাকায় খুঁজতে থাকে। কিন্তু মোস্তফা হাওলাদারের কোনো সন্ধান পায়নি সে। উল্লেখ্য মোস্তফা হাওলাদার ভিকটিম আনোয়ারের ভায়রা-ভাই। লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর জানান, খোকন হাজী একজন ঠিকাদার এবং মতিঝিল এলাকায় তার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঠিকাদারী ব্যবসার আড়ালে খোকন হাজী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব মুদ্রার কারবার করে আসছিল।

উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।