ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

কেশবপুরে ড্রাগন চাষে স্বাবলম্বী মেহেদী হাসান

কেশবপুরে ড্রাগন চাষে স্বাবলম্বী মেহেদী হাসান

যশোরের কেশবপুরে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাজু। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রয় করেছেন তিনি। অন্যের নিকট থেকে ৩ বিঘা জমি হারি নিয়ে ৩৩ শতক জমিতে এ ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন তিনি। কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতী নরেন্দ্রপুরের আব্দুল লতিফের ছোট ছেলে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ২৪ বছর বয়স্ক মেহেদী হাসান রাজু।

মেহেদী হাসান রাজু যশোরের কালীগঞ্জ থেকে ৪ হাজার ড্রাগন ফলের চারা এনে পরিবারের সহযোগিতায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৩৩ শতক জমিতে চারা রোপণ করেন। যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে উপজেলার আলতাপোল (তেইশ মাইল) গ্রামে গড়ে তোলেন তার এই ড্রাগন বাগান। ১ হাজার সিমেন্টের তৈরি করা খুঁটির সঙ্গে টায়ার ও রড ব্যবহার করে তার চারপাশ দিয়ে লাগিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রাথমিকভাবে কিছু ফল পেলেও এবার বাণিজ্যিকভাবে তিনি ড্রাগন বিক্রি শুরু করছেন। এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত কোনো কোনো খুঁটিতে লাগানো গাছ থেকে ২০ কেজি ফলও পেয়েছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি। কেশবপুর পৌর শহরে বর্তমানে অধিকাংশ ফলের দোকানে রাজুর বাগানের ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব ড্রাগন ফল পৌঁছে যাচ্ছে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির আশা রয়েছে রাজুর। নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি তিনি সৃষ্টি করেছেন পাঁচণ্ডছয়জনের কর্মসংস্থান। পরিবারের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে জমি হারি (লিজ) নিয়ে পড়ালেখার ফাঁকে এ ড্রাগন ফলের বাগানটি করেছেন তিনি। এর পেছনে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাগানে তিন থেকে চার ধরনের ড্রাগন ফলের জাত রয়েছে। এসব ড্রাগন গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে হাজারো হলুদ ও লাল রঙের ফল। পড়াশোনার ফাঁকে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে তার এ পরিশ্রমে এ বছর ড্রাগন বাগানে প্রচুর ফল এসেছে।

তিনি আকারভেদে একটি ফলের ওজন পেয়েছেন ৩০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন পাইকারি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ফল ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছিলেন। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রথমবারেই ফল বিক্রি করে তার মূলধন উঠে এসেছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির আশা রয়েছে তার। খরচ বাদে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। মেহেদী হাসান রাজু বলেন, কোনো ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান না দিয়ে বাগানের ড্রাগন ফল পাকানো হয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মেই ফল পাকলে গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। সড়কের পাশে বাগানটি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার মানুষ দেখতে আসেন। বাগানের পাশে কোনো দরিদ্র ও অসহায় মানুষ এলে তাদের বিনামূল্যে ফল খাওয়ান তিনি।

রাজুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পড়াশোনা শেষে চাকরির পেছনে যেন ছুটতে না হয়। এজন্য আগেভাগেই নিজেকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছেন। একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তিনি বলেন, আমি চাই লেখা পড়া শেষ করে সবাই এভাবে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারেন।

রাজুর বাগানে নিয়মিত পাঁচ থেকে ছয়জন শ্রমিক ড্রাগন বাগানে পরিচর্যার কাজ করে থাকেন। তাদের প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। বাগানে কাজ করার সময় আলতাপোল গ্রামের মোনতাজ সরদার (৬২) বলেন, ড্রাগন বাগান দেখভাল করেন তিনি। ভোরবেলায় বাগানে এসে ড্রাগন ফুলের পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য ও বাগান পরিচর্যা করা, ফল পাড়াসহ সেগুলো বাজারজাত করার কাজ করেন। শ্রমিক আব্দুর রশিদ (৫৪) বলেন, প্রতিদিন ৩০০ টাকা মজুরিতে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এ বাগানে কাজ করেন। এই বাগানের ফলের ভেতর থাকলে তার মনটাও আনন্দে থাকে। পরিবার নিয়ে তিনি ভালোই রয়েছেন। এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, ড্রাগন বাগান আমি দেখেছি। তিনি আমাদের কাছে যে কোনো পরামর্শ চাইলে অবশ্যই তাকে পরামর্শ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত