কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আপন ছোট ভাইয়ের নির্বাচনি পথসভায় গিয়ে ‘আমার সঙ্গে যারা বিরোধিতা করবে তারা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান। গত বুধবার সন্ধ্যায় খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের গোসাইডাঙ্গি গ্রামে এই পথসভা হয়। তার এই বক্তব্যের ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরাসহ সাধারণ ভোটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
৮ মে প্রথম দফায় খোকসা উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হলেন সদর উদ্দিন খানের ছোট ভাই রহিম উদ্দিন খান। ভাইয়ের পথসভায় এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আল্লাহ পাক উন্নয়ন করাবে আমাকে দিয়ে। আমার সঙ্গে যারা বিরোধিতা করবে তারা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শয়তানরাও মসজিদে আসবে, শয়তানরাও গোরস্তানে শোবে। শয়তানরা মসজিদে এসে সুখে থাকতে পারবে না। আর গোরস্তানে গেলে শয়তানদের যেভাবে মাটিচাপা হবে আপনারা কল্পনাই করতে পারবেন না।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি শয়তানের অনুসারীদের বলব, শয়তানের সঙ্গে থেকে এই শাস্তি ভোগ করার দরকার নেই। যারা শয়তান কয়েকজন আছে থাক, তা বাদে সবাই আপনারা একসঙ্গে আসবেন। একসঙ্গে হয়ে জয় সুনিশ্চিত করেন। আল্লাহ পাকের রহমতে আজকে বলে গেলাম জয় সুনিশ্চিত।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে তিনজন হেভিওয়েট। দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি নেতারা বিচ্ছিন্নভাবে পক্ষ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আখতার, সিনিয়র সহ-সভাপতি রহিম উদ্দিন খান ও যুগ্ম সম্পাদক আল মাছুম মোর্শেদ। রহিম উদ্দিন খান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের ভাই। এরমধ্যে আবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নিজের ছেলেকে মাঠে দাঁড় করিয়েছেন রহিম উদ্দিন খান। তিনি প্রার্থী হলেও বাবার পক্ষে মাঠে ভোট করছেন।
অপরদিকে এই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আটজন ভাইস চেয়ারম্যান ও তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত জেলা মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ইসরাত জাহান পুনম প্রচারণায় রয়েছেন। তিনি অবশ্য টানা তিনবারের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সদর উদ্দিন খান তার ভাইকে জেতানোর জন্য মরিয়া। তার পক্ষে তিনি নির্বাচনি সভা-সমাবেশ করছেন। এর আগে তার ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচন করার জন্য থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে সদর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। সে সময় দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা শেখ আব্দুল মান্নান মনে করেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করা বিএনপি নেতারা দলটির জন্য গলার কাঁটা হতে পারে। চেয়ারম্যান পদের তিন প্রার্থীর সাথে বিএনপি নেতারা নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা থাকলেও থাকতে পারে। তবে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা বর্তমান সরকারের প্রত্যাশা। বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলার জন্য সদর উদ্দিন খানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি। খোকসা উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ জন। যার মধ্যে ৫৭ হাজার ৩২০ জন পুরুষ এবং ৫৬ হাজার ৬৩৩ জন নারী ভোটার।