দেশব্যাপী চলমান তাপপ্রবাহে একদিকে মানুষ যেমন অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ অন্যদিকে লোডশেডিং মাত্রারিক্তভাবে বেড়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চাহিদার বেশিরভাগই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। একইসাথে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিছিয়ে নেই। কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর জন্য দুঃসংবাদ হলো কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পর্যাপ্ত পানির অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাপ্তাই হ্রদে ক্রমাগত পানি কমে যাওয়ার কারণে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে।
চলমান খরায় পর্যাপ্ত পানির অভাবে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটিতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। চালু রয়েছে শুধু একটি ইউনিট। আর সহসাই বৃষ্টি না হলে এটিও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে পুরো কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে পারে চট্টগ্রামের মানুষজন। এভাবেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহ। তিনি বলেন, এ সময়ে কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৮৫ মিটার এমএসএল। কিন্তু শনিবার (৪ মে) সকাল ৮টায় পানি ছিল ৭৩.৬০ মিটার এমএসএল। সন্ধ্যা ৬টায় পানির লেভেল কমে হয়েছে ৭৩.৫৮ মিটার এমএসএল। প্রচণ্ড গরমে পানির লেভেল দ্রুত কমে যাচ্ছে। পানির লেভেল ৬৮ এমএসএল নেমে এলে পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এখন যেভাবে পানি কমে যাচ্ছে, তাতে চালু থাকা ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের ২৪২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। চালু থাকা ইউনিটের ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ইউনিট চালু থাকলেও তা থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, বৃষ্টি হলেই কেবল বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে। এজন্য বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে চেয়ে আছি।
জানা যায়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বনিম্ন ব্যয় হয় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। ইউনিটপ্রতি গড় ব্যয় মাত্র ২৮ থেকে ৩০ পয়সা। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিক থেকে কাপ্তাই লেকে পানি কমতে থাকে। মার্চে গিয়ে তা আরো কমে যায়। এখন একবারেই কমে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে যেকোনো সময় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটেরই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে পানি আছে ৭৩ দশমিক ৬১ এমএসএল। যদিও রুল কার্ড অনুযায়ী থাকার কথা ছিল ৮১ দশমিক ৬২ এমএসএল। স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ এমএসএল পানি কম আছে কাপ্তাই হ্রদে। গত বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে বৃষ্টিপাত হলেও হ্রদে পানির পরিমাণ তেমন বাড়েনি। হ্রদে পানি সংকটের কারণে পাহাড়ের কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে বেড়েছে ভোগান্তি। এবার শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমেছে ৩০ মেগাওয়াটে, যেখানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট। হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় প্রায় ২১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে এই কেন্দ্রে। কম বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে রাঙামাটি শহরজুড়ে। দিনের বেশিরভাগ সময়েই হচ্ছে লোডশেডিং। এতে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট শুধু বর্ষা মৌসুমেই চালু করা সম্ভব হয় যখন হ্রদে সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি থাকে। এছাড়া বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা কমতে থাকে। সচরাচর এপ্রিল মাসের শুরুর দিক থেকে তীব্র দাবদাহের কারণে হ্রদের পানি হ্রাস পেতে থাকে খুব দ্রুত। ফলে হ্রদের পানির ওপর নির্ভরশীল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।